আজ মালদায় প্রশাসনিক বৈঠক মমতার, উঠতে পারে জেলা পরিষদের প্রসঙ্গও
গত বেশ কয়েকমাস ধরে মালদা জেলা পরিষদ কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে রয়েছে। সভাধিপতি পদে নতুন কাউকে নির্বাচিত করতে সদস্যদের কালঘাম ছুটছে। এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার দুপুরে মালদা জেলা প্রশাসনকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে বিষয়টি ওঠে কি না সেদিকে অনেকেই তাকিয়ে রয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূল সদস্যরা তাঁকে পদ থেকে অপসারণের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত গৌরবাবুকে সরে যেতে হয়। সহকারী সভাধিপতি বর্তমানে দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন। এদিকে, সভাধিপতি পদ ফাঁকা পড়ে থাকায় নানারকম প্রশাসনিক সমস্যা হচ্ছে বলে আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন। বর্তমানে জেলা পরিষদের আওতায় অনেক প্রকল্প রূপায়িত হয়। জেলা পরিষদের প্রধান চালিকাশক্তি না থাকায় উন্নয়নমূলক কাজ রূপায়ণে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা রাজ্যকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত এ ব্যপারে রাজ্য থেকে তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। জেলা পরিষদে বর্তমানে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। ফলে তৃণমূল সুপ্রিমো হিসেবেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন। সেক্ষেত্রে তাঁর দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে দ্রুত একজনকে নেতা নির্বাচন করে সভাধিপতির আসনে বসানোর জন্য তিনি বলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কেন তৃণমূল সভাধিপতি নির্বাচন করতে পারছে না তা নিয়ে দলের অন্দরেও নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।
সভাধিপতি হওয়ার দৌড়ে তৃণমূলের একাধিক নেতা-নেত্রী। তাঁরা কেউই নিজেদের জায়গা ছাড়তে চাইছেন না। সংশ্লিষ্ট সদস্যদের পিছনে জেলাস্তরের নেতা-নেত্রীরাও রয়েছেন। ফলে লবি ধরে সভাধিপতি হওয়ার ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে। ফলে বিষয়টি একমাত্র রাজ্যস্তরে মিটমাট হতে পারে। খোদ নেত্রী বর্তমানে জেলায় রয়েছেন। তিনি কোনও নির্দেশ দিলে তা সকলে মানতে বাধ্য। সে কারণে এদিনের বৈঠকের দিকে সকলেই তাকিয়ে রয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্ব বা আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
প্রসঙ্গত, দেশের যে কয়েকটি রাজ্যে মজবুত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে, তারমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। ওই ব্যবস্থায় জেলা পরিষদ সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। রাজনৈতিক মহল সভাধিপতিকে জেলার ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে অভিহিত করে। তাঁর হাতে অনেক ক্ষমতা রয়েছে। সভাধিপতি জেলা প্রশাসনকেও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ফলে আধিকারিকরা পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার আওতায় ঠিকঠাক কাজ করছেন কি না তা নজর দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া, মালদায় গত কয়েক মাসে ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্তে কেন্দ্রীয় দলও জেলায় ঘুরে গিয়েছে। পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে লাগামছাড়া অনাস্থা নিয়েও প্রশাসন ও রাজ্যের শাসকদল বিব্রত। এই পরিস্থিতিতে সভাধিপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ মাসের পর মাস ফাঁকা পড়ে থাকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।