দুর্যোগপীড়িত মানুষের খোঁজ পেতে হবে রেডিওর ব্যবহার, তথ্যভান্ডার তৈরী করছে রাজ্য
বারবার রাজ্যের উপকূলে আছড়ে পড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর সেই দুর্যোগপীড়িত মানুষের খোঁজ পেতেই দরকার আকাশতরঙ্গের অনুসন্ধান। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যখন সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অথবা দুর্বল, তখন মানুষকে খুঁজে বের করে সাহায্য পৌঁছে দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে। মোবাইল বা ল্যান্ড ফোন যখন ভরসা হারায়, স্যাটেলাইট ফোনও যখন অকেজোপ্রায়, তখন অগতির গতি হয়ে দাঁড়াতে পারে রেডিও। তাই আকাশে কান পাততে চলেছে রাজ্য সরকার। শূন্যস্থানের কোন স্থানে সবচেয়ে ভালো রেডিও সিগন্যাল মিলবে তা খোঁজার উদ্যোগ শুরু হতে চলেছে রাজ্য জুড়ে। সব মিলিয়ে রেডিও সিগন্যালের শক্তির সমীক্ষা হবে এবং সেটির তথ্যভাণ্ডার বানাবে রাজ্য। হ্যাম রেডিও বা পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের একটি বিশেষ উদ্যোগকে হাতিয়ার করে শুরু হতে চলেছে কাজ। সমীক্ষা শুরু হবে সুন্দরবন থেকে। ভৌগলিক বৈচিত্রের কারণে ওই এলাকাকে প্রথমে বেছে নেওয়া হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে গোটা রাজ্যে শক্তিশালী রেডিও সিগন্যাল খোঁজার কাজ শুরু হবে। কীভাবে হবে এই রেডিও সিগন্যালের সমীক্ষা? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আকাশ জুড়ে রেডিও সিগন্যাল ছড়িয়ে থাকে। বাড়িতে যে রেডিও চলে তা এই সিগন্যালকে ধরতে পারে বলেই চলে। এই সিগন্যালেই কথা আদানপ্রদান করা যায়। বন্যা, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বা প্রবল ঝড়ের দাপটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে সহায় হতে পারে রেডিও সিগন্যাল। বিপর্যস্ত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো বা ত্রানের জোগান দিতে রেডিও সিগন্যালের সাহায্যেই যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দুর্যোগে রেডিও বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে। তবে এই যোগাযোগ ব্যবস্থারও কিছু ত্রুটি রয়েছে।
আকাশের সর্বত্র সিগন্যাল এক রকম হয় না। কোথাও সিগন্যাল দুর্বল কোথাও শক্তিশালী। দুর্যোগের সময় সবল সিগন্যাল কোথায় আছে তা জানতে অনেকটা সময় লেগে যায়। তাতে ব্যাহত হয় উদ্ধার কাজ। জোড়ালো সিগনাল খোঁজার কাজটি আগেই সেরে রাখতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাব। রাজ্যের পাহাড় থেকে সমুদ্র, বন থেকে সমতলে সমীক্ষা করে রাখার উদ্যোগ তারা নিয়েছে। ঠিক কোথায় গেলে প্রয়োজনীয় শক্তির সিগন্যাল মিলবে তা খতিয়ে দেখে একটি তথ্যভান্ডার গড়ার পরিকল্পনা হয়েছে। যাতে ঘোর দুর্যোগের সময় ওই তথ্য থেকেই বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে যাওয়া কর্মীরা মূল কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। বাঁচাতে পারেন মানুষের জীবন, গবাদি পশু থেকে অস্থাবর সম্পত্তি। সরকার এই উদ্যোগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, বন্যাতে বড় বাড়ি ব্যবহার করে রেডিও সিগন্যাল খোঁজা যায়। কিন্তু ঝড়ে বা ভূমিকম্পে তা করা যায় না। তাই সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে আগাম সমীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা এর নাম দিয়েছি ‘পার্কস অন এয়ার’। এদেশে এটাই প্রথম উদ্যোগ। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সবসময় নানা প্রয়াস করেছেন। এই আধুনিক উদ্যোগ আমরা সেকারণেই নিয়েছি।