নেতাজির জন্য মোবাইল মিউজিয়াম নিখরচায় ব্যবস্থায় করবে না কেন্দ্র, ক্ষুব্ধ বসু পরিবার
দেশের ‘শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকে’র আখ্যাধারী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁর ১২৫তম জন্মবর্ষে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একটি বিশেষ ট্রেনে মোবাইল মিউজিয়ামের ব্যবস্থার দাবি উঠেছিল। কিন্তু ওই ট্রেনের ভাড়া এবং সামগ্রিক খরচ ছাড়া নিখরচায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের রেলমন্ত্রক এই ব্যবস্থা করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তাও আবার যাকে তাকে নয়। রেলবোর্ডের অন্যতম একজিকিউটিভ ডিরেক্টর (আই অ্যান্ড পি) রাজেশ দত্ত বাজপাল লিখিতভাবে সোজাসাপ্টা একথা জানিয়ে দিয়েছেন খোদ বসু পরিবারের মুখপাত্র তথা নেতাজির নাতি চন্দ্রকুমার বসুকে। নেতাজির ১২৫তম জন্মবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্র যে জাম্বো কমিটি গঠন করেছিল তার অন্যতম সদস্য হলেন চন্দ্রবাবু। সেই পদাধিকারবলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তিন মাস আগে এই মোবাইল মিউজিয়াম করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই চিঠির জেরেই ওই রেলকর্তা তাঁর জবাবি চিঠি পাঠিয়েছেন চন্দ্রবাবুকে।
রেলমন্ত্রকের এহেন উত্তর পেয়ে চন্দ্রবাবুরা যার পর নাই ক্ষুব্ধ। নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য রেলমন্ত্রক যেভাবে বিপুল খরচের অজুহাতকে সামনে এনেছে তাতে তিনি স্তম্ভিত। শুক্রবার তিনি বলেন, ওই রেলকর্তাকে আমি আমার জবাব পাঠিয়েছি। মোদী সরকারের গোটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রককে নোডাল এজেন্সি করা হয়েছে। তাই রেলকে ওই মন্ত্রকের সঙ্গে এব্যাপারে যোগাযোগ করতে বলেছি। প্রয়োজনে পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে আমি কিছু পরামর্শ দিতে পারি ওদের। তবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘুরে আসা আমার প্রস্তাব সম্বলিত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রেলমন্ত্রক যেভাবে খরচের প্রশ্ন তুলেছে তাতে আমাদের গোটা পরিবার এবং অসংখ্য নেতাজি অনুগামী আশ্চর্যবোধ করছি। এই মহান দেশপ্রেমিকের ক্ষেত্রে এত বড় মন্ত্রক যদি খরচের প্রশ্ন তুলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায় তাহলে কিছু বলার নেই।
গত সেপ্টেম্বরে মোদীকে পাঠানো প্রস্তাবে বসু পরিবারের এই মুখপাত্র বলেছিলেন, চারটি কামরা বিশিষ্ট একটি বিশেষ ট্রেনকে মোবাইল মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করে দেশের সব প্রান্তে ঘোরানো হোক। ওই চলমান মিউজিয়ামে নেতাজির জীবনী সংক্রান্ত তথ্য, তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রী ডিসপ্লে করার পাশাপাশি একটি কনফারেন্স হলের বন্দোবস্ত থাকবে। সেই হলে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও নেতাজি গবেষকরা যাতে মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করতে পারে তারও আয়োজন করা থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে নির্দিষ্ট দিনের জন্য এই মোবাইল মিউজিয়াম ট্রেনটি দাঁড়াবে সাধারণ মানুষের দর্শনের সুবিধার্থে। এই ধরনের উদ্যোগ নিলে নেতাজির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দেশের সাধারণ জনতা অবগত হওয়ার সুযোগ পাবে।
প্রস্তাব সম্বলিত এই চিঠি পাঠানোর প্রায় তিন মাসের মাথায় রেলমন্ত্রকের তরফে উত্তরটি পেয়েছেন চন্দ্রবাবু। সেই চিঠিতে রেলকর্তা বাজপাল স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই ধরনের উদ্যোগ রেল কখনওই টাকা ছাড়া নেয় না। মোবাইল মিউজিয়াম তৈরি বাবদ বিপুল খরচ হয়। পাশাপাশি চারটি কামরা বাবদ এবং ট্রেনটি পরিক্রমার মোট দূরত্ব ও স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্যও আলাদা করে ভাড়া দিতে হবে রেলকে। উদ্যোক্তাদের তরফে নোডাল মন্ত্রক হিসেবে যারা এই পরিকল্পনার পিছনে থাকবে তাদেরই এই টাকা বহন করতে হবে। কিন্তু সংস্কৃতি মন্ত্রক সেই দায়িত্ব নেবে কি না তা নিয়ে কেউ কিছু চন্দ্রবাবুদের জানায়নি।