হাম করেঙ্গে, মরেঙ্গে, লেকিন হাটেঙ্গে নেহি- গোয়ায় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
আগামী বছর গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন তার আগেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো ঘোষণা করে দিলেন লড়াইয়ের কথা। আজ গোয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গোয়ায় লড়াই হবে, খেলা হবে। গোয়ার ভাষাতেও তিনি “খেলা হবে”র তর্জমা করেন। এদিনের বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টত জানান, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হতে তিনি আসছেন না। তিনি বা তাঁর বাংলার কোনো নেতৃত্বই গোয়া চালাবেন না। গোয়ায় মানুষকেই গোয়া চালাতে, গোয়ার নাগরিকই গোয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি এও জানান উন্নত-সাবলম্বী গোয়ায় জন্যই তৃণমূলের গোয়া আসা। গোয়া যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তাই তৃণমূলের লক্ষ্য। সাগরপাড়ের রাজ্যের মানুষের সামনে তিনি ও তাঁর দলই বিকল্প। গোয়ায় উন্নতির জন্য তৃণমূল কাজ করবে। গোয়ায় ভূমিপুত্রই গোয়ায় চালাবে, বাংলার তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সুচারু ভাবে গোয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
গোয়ায় অন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করতে আসা থেকে শুরু করে রেলমন্ত্রী হিসেবের কঙ্কন রেলওয়ে স্থাপন, এই সব প্রসঙ্গই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে উঠে এসেছেন।
তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরে দেখেছি গোয়ার জন্য কেউই আসেনি, শুধু নির্বাচনের সময় আসে আর বলে যায়। তাই গোয়ার মানুষের জন্য আমরা এলাম।“
গোয়ার ছাত্র-যুব থেকে শুরু করে কৃষক-শ্রমিক-মৎসজীবী সকলের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সকলের ভবিষতের জন্য তৃণমূলের পরিকল্পনা রয়েছে। এক কথায় আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত গোয়ায় তৃণমূলের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে দিলেন। গোয়ায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য তৃণমূল কাজ করবে, তৃণমূল কাজ করতেই এসেছে, একথাও আজ দ্বর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর কথায় গোয়ার মানুষজন-বৈচিত্র-ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার কথাও উঠে এসেছে। বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্য, সেই বহুত্ববাদই ধরা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্যে। তিনি সকলকে নিয়ে থাকেন, সমাজের সর্বস্তরের উন্নয়ন করেন, গোয়াতেও তৃণমূল তাই করবে এও জানান তিনি। এদিন গোয়ায় নারী ক্ষমতায়নের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে গোয়ায় পর্যটন শিল্পের মানোন্নয়নের কথাও বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপি সরকারের “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও”-এর বিজ্ঞাপন সর্বস্ব প্রচারকেও কটাক্ষ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার উন্নয়নের কথাও তিনি গোয়াবাসীর সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলা দেশের মধ্যে এক নম্বর। বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। ৪০ শতাংশ দারিদ্রতা কমেছে। দুয়ারে রেশনের মধ্যে বাংলার প্রতিটি মানুষ বিনা মূল্যে বাড়ির দরজায় রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা ফ্রী, সরকারি হাসপাতালে বেড, ওষুধের পয়সা লাগে না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মধ্যেম বেসরকারি জায়গাতেও ৫লখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ফ্রী করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েরা কন্যাশ্রী পাচ্ছে।“ তাঁর আগামী লক্ষ্য বাংলার শিল্পায়ন তাও তিনি এদিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সামাজিক উন্নয়ন শেষ এবারের লক্ষ্য বাংলার শিল্পায়ন। বলাইবাহুল্য তিনি মডেল বাংলাকেই এদিন গোয়ায় সামনে তুলে ধরলেন। বাংলা পারলে গোয়া কেন পারবে না, বাংলায় যা যা হয়েছে গোয়ায় তৃণমূল ক্ষমতায় এলে তাই তাইই যে হতে চলেছে, এদিন যেন সেকথাই যেন বলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির বিভাজনের রাজনীতিকে এদিনের সভা থেকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি, সিবিআইকে যেভাবে বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ব্যবহার করছে তারও তীব্র সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট বিভাজন করার যে অভিযোগ বিরোধীরা করেছে, তার জবাব দিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোট ভাগ করতে নয়, তৃণমূল গোয়ায় এসেছে ভোট সুসংবদ্ধ করতে।“ তৃণমূল এসেছে তৃণমুল-এমজিপি জোটের হয়ে ভোট চাইতে। গোয়ায় সকল ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে একসঙ্গে থাকার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “হাম করেঙ্গে, হাম মরেঙ্গে, লেকিন হাম হাটেঙ্গে নেহি”
এদিন তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বড়দিন এবং আসন্ন নতুন বছর উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।