গত দেড় দশকে রাজ্যের প্রাপ্য ১৫ হাজার কোটি দেয়নি কেন্দ্র, বঞ্চিত বাংলা
গত দেড় দশকে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা হাতছাড়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। এই টাকা প্রাপ্য ছিল রাজ্য সরকারের। এর জন্য রাজ্য সরকার দায়ী নয়, বরং এই বঞ্চনার দায় কেন্দ্রের দুই সংস্থা রেল ও টেলিকম দপ্তরের। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) শতবর্ষ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজ্যের বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পিএসি কমিটির সদস্য রবীন্দ্রনাথ (রবি) চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, রেল এবং টেলিকম খাতে এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে রাজ্যকে। ক্যাগ এনিয়ে বহুবার প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু, এবিষয়ে রাজ্যকে সহায়তা করার মতো কোনও অস্ত্র পিএসির হাতে নেই। ওই সম্মেলনে এই প্রশ্নে রবিবাবুর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিরাও।
এদিকে, ওই সম্মেলনে এ নিয়ে বিশদে বলার জন্য লিখিত ভাষণ তৈরি করে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। সময়ের অছিলায় তাঁকে তা পড়তে দেওয়া হয়নি। যদিও, সভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংসদের পিএসির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরীর নির্দেশে তিনি ওই লিখিত ভাষণ জমা করে এসেছেন। তাঁর সম্পূর্ণ ভাষণ যাতে রেকর্ডে নথিভুক্ত করা হয়, তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার তরফেও পরে চিঠি পাঠানো হয়েছে সংসদের অফিসকে।
প্রসঙ্গত, সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসেবের নাড়ি-নক্ষত্র খতিয়ে দেখার জন্য দেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় শতবর্ষ আগে তৈরি হয়েছিল পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ক্যাগও সরকারের খরচ বা আয় নিয়ে নিয়মিত অনুসন্ধান চালিয়ে তার ত্রুটি-বিচ্যুতি সামনে তুলে আনে। তবে ক্যাগ তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করার আগে পিএসিকেও এনিয়ে প্রশ্ন করে। সংসদ এবং বিধানসভা— উভয় স্তরেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে গোটা দেশে। কিন্তু এই ব্যবস্থায় রাজ্য বিধানসভার পিএসি কতটা অসহায়, তা স্পষ্ট করে দিলেন কমিটির অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেছেন, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ রাজ্যে নয়া রেললাইন বা অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরির জন্য ঠিকাদারদের দিয়ে বছরের পর বছর হাজার হাজার কিলোমিটার মাটি কেটেছে। রাজ্যের মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস অ্যাক্ট ও রুলস অনুযায়ী মাটি কাটার জন্য স্থানীয় জেলা ভূমিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। এর জন্য রাজ্যের সেস পাওয়ার কথা। কিন্তু, সেই প্রাপ্য সেস জমা না দিয়েই রেলের ঠিকাদাররা এই কাজ করে চলেছে। এই খাতে প্রাপ্য আদায়ের জন্য রাজ্য সরকার রেলকে বারবার চিঠি দিলেও কানে তোলেনি তারা। অথচ এর জন্য যে রাজ্যকে বিপুল রাজস্ব ক্ষতি সইতে হচ্ছে, তা নিয়ে বারবার ক্যাগের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে পিএসিকে। তারা এ নিয়ে একাধিকবার রাজ্যকে চিঠিও দিয়েছে।
রবিবাবু জানান, টেলিকম তথা মোবাইল নেটওয়ার্কের বিভিন্ন সংস্থা তাদের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বারবার রাস্তা খোঁড়ে। এজন্য কেন্দ্র ২০১০ সালে ২৫ বছরের জন্য এককালীন লাইসেন্স ফি ধার্য করে সার্কুলার জারি করেছিল। তার ভিত্তিতে ২০১৩ সালে রাজ্য সরকারও সার্কুলার জারি করে সংস্থাগুলিকে ১৫ বছরের জন্য এককালীন ফি জমা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু আইনি দোহাই দেখিয়ে সংস্থাগুলি ওই ফি জমা দেয়নি। ফলে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। ক্যাগ এ নিয়ে রাজ্য পিএসির বক্তব্য জানতে চেয়েছে। রবিবাবু বলেন, এই অবস্থায় রাজ্যকে সাহায্য করার মতো কোনও আইনি অস্ত্র ‘পিএসি’র হাতে নেই। ফলে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে রাজ্য।