যশের ক্ষত সরিয়ে বড়দিনের প্রাক্কালেই নবরূপে সুসজ্জিত দীঘার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী
যশ সাইক্লোনে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে বড়দিনের প্রাক্কালেই নতুন সাজে সেজে উঠেছে দীঘা। রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএসডিএ(দীঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা) দীঘাকে সাজানোর লক্ষ্যে মোট ৩০টি স্কিম হাতে নিয়েছিল। ইতিমধ্যে সেই কাজ প্রায় শেষ। ওল্ড দীঘার বিশ্ববাংলা-১ ও ২নম্বর উদ্যানে সৌন্দর্যায়নের টানে রোজই প্রি-ওয়েডিং ফটোশ্যুট হচ্ছে। এছাড়াও সি-বিচ বরাবর আলো ও সবক’টি রাস্তাকে ঝাঁ চকচকে করে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে নবরূপে সেজে ওঠা দীঘার উদ্বোধন করাতে চাইছে জেলা প্রশাসন। তার আগে ওল্ড দীঘার সৌন্দর্যায়নের বেশকিছু ছবি জেলা প্রশাসন নবান্নে পাঠিয়েছে। ডিসেম্বর মাসের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে যশ পরবর্তী দীঘার পুনর্গঠন ও সৌন্দর্যায়নের কাজের উদ্বোধন করতে পারেন। একইসঙ্গে স্টেশন লাগোয়া বিলামড়িয়া মৌজায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
এতদিন দীঘার সৌন্দর্যায়ন ছিল মূলত বিশ্ববাংলা-১ নম্বর পার্ক কেন্দ্রিক। সেখানে সুসজ্জিত গেট, বিশ্ববাংলা গ্লোব, সেলফি জোনের টানে পর্যটকরা ভিড় জমাতেন। ঘাটের অপর প্রান্তে বিশ্ববাংলা-২ নম্বর উদ্যান ততটা নজর কাড়ত না। গত মে মাসে যশ সাইক্লোনে দু’টি উদ্যান ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় দু’টি উদ্যান ঢেলে সাজানোর কাজে হাত লাগায় ডিএসডিএ। এই মুহূর্তে বিশ্ববাংলা-২নম্বর উদ্যানের সৌন্দর্যায়নের টানে প্রি-ওয়েডিং শ্যুটিং স্পটে পরিণত হয়েছে। সুসজ্জিত গেট দিয়ে ঢুকতে হবে এই পার্কে। সন্ধ্যার পর আলোকসজ্জায় আকর্ষণ কয়েকগুণ বাড়ছে। পার্কে ঢোকার পর দামি টাইলসে মোড়া পথ। সামনে গোলাকার বাগান। সবুজের গালিচা মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেওয়ার মতো। তারমধ্যে বসার জায়গা রয়েছে। সেখানে তিব্বতীয় পরিবেশ আনা হয়েছে। কিছুটা দূরেই বাড়ির শোকেসে সাজানোর মতো দাবার বোর্ড ও গুটির আদলে মনোমুগ্ধকর ছবি। মাথার উপর হাইমাস্ট লাইট। নির্দিষ্ট দূরত্বে বসেছে সুসজ্জিত আলো। উদ্যানে রয়েছে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য খেলার সামগ্রী। এদিন বাগানে অনেক পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁদের সেখানে নিয়ে এসেছিলেন টোটো চালক তপন প্রামাণিক। দীঘায় জগন্নাথ মন্দির লাগোয়া তপনের ফাস্টফুডের দোকান ছিল। যশ সাইক্লোনে সেই দোকান ও যাবতীয় সামগ্রী ভাসিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে। তারপর থেকেই পেশা বদলে তপন এখন টোটোচালক। তপন বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু, তারচেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছি দীঘার শ্রীহীন অবস্থা দেখে। রাজ্য সরকারের তৎপরতায় দীঘা আগের থেকেও কয়েকগুণ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সত্যিই আমরা অভিভূত।বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীঘায় প্রস্তাবিত পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে মন্দির তৈরির জন্য ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। শুক্রবার বিলামড়িয়ায় প্রস্তাবিত সেই জমিতে গিয়ে দেখা গেল, জোরকদমে বাউন্ডারি ওয়াল তৈরির কাজ চলছে। মোট ২৫ একর জমি ঘেরার পরই শুরু হবে মন্দির তৈরির কাজ। ডিএসডিএর এগজিকিউটিভ অফিসার মানসকুমার মণ্ডল বলেন, ৩০টি স্কিমের মধ্যে ১৬টির কাজ শেষ। বাকি ১৪টির কাজ শেষের পথে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবরূপে সজ্জিত দীঘার উদ্বোধন করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর আসার সম্ভাব্য দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।