রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই ‘মা ক্যান্টিন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল, অভিযোগ তৃণমূলের
কলকাতা পুরভোটের ঠিক আগের দিন ফের রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (WB Governor Jagdeep Dhankhar)। ‘মা ক্যান্টিনে’র বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের অর্থদপ্তরের প্রধান সচিবকে চিঠি পাঠালেন তিনি। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ। পুরভোটের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজ্যপাল এ কাজ করেছেন বলে দাবি তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের ‘মা ক্যান্টিন’ প্রকল্পের বাস্তবায়নে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ‘মা ক্যান্টিনে’ মাত্র ৫ টাকায় মেলে ভাত, ডাল, তরকারি এবং ডিমের ঝোল। দুস্থদের কথা ভেবে করোনাকালে মাত্র ৫ টাকায় পেট ভরা খাবারের ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। দিনকয়েক আগেও ‘মা ক্যান্টিন’ নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী দিনে ‘মা ক্যান্টিনে’র সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথাও বলতে দেখা যায় তাঁকে।
এবার সেই প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়েই প্রশ্ন তুললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ইতিমধ্যেই বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলে অর্থ দপ্তরের প্রধান সচিবকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। জবাব তলবের চিঠি পোস্ট করে শনিবার সকালে একটি টুইট করেন রাজ্যপাল। তাঁর দাবি, ১ এপ্রিল, ২০২১ থেকে প্রকল্প চালুর কথা ছিল। বাস্তবায়নে বরাদ্দ হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। কীভাবে দেড় মাস আগেই প্রকল্প চালু হল, সে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করা হয়।
রাজ্যপালের টুইট নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর তরজা। রাজ্যপাল ‘মা ক্যান্টিন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভুল কিছু করেননি বলেই দাবি বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের। যদিও তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) রাজ্যপালের টুইটের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর দাবি, কলকাতা পুরভোটের আগে কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একাজ করেছেন রাজ্যপাল। তৃণমূল নেতার মতে, “সাধারণ মানুষ চক্রান্তের জবাব রবিবার ভোটবাক্সে দেবেন।” দিনকয়েক আগেই পেগাসাস নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে পৌঁছয়। তথ্য চেয়েও পাননি বলেই অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সংঘাতের আবহেই আবারও টুইটে তোপ দাগলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান জগদীপ ধনকড়।
এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পাল্টা কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপালকে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া সরকারের কাজ, রাজ্যপাল কি সেই উদ্যোগ বন্ধ করতে বলছেন?’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ পাঁচ টাকার বিনিময়ে ডাল-ভাত-সবজি-ডিম খাবেন। তাতেও রাজ্যপালকে নজর দিতে হবে?’’ রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাবে কটাক্ষ করেছেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেটে মা প্রকল্পের ঘোষণা হওয়ার পর পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে তার কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যে মোট ৪৮৫টি মা ক্যান্টিন শুরু হয়েছিল, এবং তা এখনও চলছে। রাজ্যপাল প্রশ্ন তুললেই তা বন্ধ করে দেওয়া হবে না। কারণ গরিব মানুষ পাঁচ টাকার বিনিময়ে খেতে পাচ্ছেন।’’ এর পরেই চন্দ্রিমা রাজ্যপালের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়াই তো সরকারের কাজ। আমরা সে কাজই করেছি। রাজ্যপাল কী এই উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে বলছেন? ওঁর কেন গায়ে লাগছে!’’
অমিতকে রাজ্যপালের আক্রমণ প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘অমিত মিত্র নিজের কাজের স্বচ্ছতা প্রমাণ করেছেন। এবং বিজিবিএস নিয়ে যা বলার তিনি জনসমক্ষেই বলেছেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা কী রাজ্যপালের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে?’’ চন্দ্রিমার আরও প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যপাল যেন ভুলে না যান, তিনি একটি রাজ্যের রাজ্যপাল। কোনও রাজনৈতিক দলের পালক নন। তাই আমরা বলব, রাজ্যপাল নিজের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই কাজ করুন।’’
রাজ্যপালের টুইট নিয়ে সরব হয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘মা প্রকল্পে গরিব মানুষ অল্প পয়সায় পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছেন। কিন্তু জনতার করের পয়সায় আপনি রাজভবনে যে টি-পার্টিগুলির আয়োজন করছেন, তার হিসাব দিচ্ছেন না কেন?’
এই নিয়ে পাল্টা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy) বলেন, “সরকার শুধুমাত্র বিধানসভার কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য। সেখানেই যা জবাব দেওয়ার দেওয়া হবে। রাজ্যপালের দেখার বিষয় নয় এটা। রাজ্যপাল ফের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের দৃষ্টান্ত রাখলেন।”