চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনায় সাফল্য বেড়েছে রাজ্য খাদ্যদপ্তরের
গত কয়েক বছর ধরেই ফড়েদের দূরে রেখে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার উপর বিশেষ জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। চলতি খরিফ মরশুমে এই সংক্রান্ত নজরদারি ব্যবস্থা আরও কড়া করা হয়েছে। ফলে ফড়েদের ‘অনুপ্রবেশ’ অনেকটাই আটকানো গিয়েছে বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। ধান কেনার সরকারি পরিসংখ্যানেও এর প্রতিফলন হচ্ছে। প্রকৃত চাষিদের কাছ থেকে কেনার কারণেও গতবারের এই সময়ের তুলনায় সরকারি ধান কেনার পরিমাণ এবার কিছুটা কম। তবে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চাষিরা ধান বিক্রি করতে আরও বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন। ফলে গত কয়েকদিনের মধ্যে ধান কেনার পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষ ৯ হাজার টন ধান সরকার কিনেছে। সরকারি উদ্যোগে ধান কেনায় আরও স্বচ্ছতা আসায় ফায়দা পাচ্ছেন ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা।
খোলাবাজারের তুলনায় সরকারের নির্ধারিত দাম অনেকটাই বেশি থাকে। এই কারণে ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার আগ্রহও বেশি থাকে। কিন্তু ফড়েরা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে তা সরকারের কাছে বিক্রি করতে সক্রিয় হন। তাই ফড়েদের আটকাতে গত কয়েক বছর ধরে সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম ধান বিক্রির টাকা চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো শুরু করা হয়। এবার নজরদারি ব্যবস্থা আরও ‘সূক্ষ্ম’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের কৃষি সংক্রান্ত উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান কেনার সময় চাষির জমির পরিমাণ কতটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজন চাষি সরকারের কাছে ৪৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারেন। এবার চাষির জমির পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ধান কেনা হচ্ছে। আগে নজরদারির অভাবে এদিকে কিছুটা ফাঁক থেকে যেত। যার সুযোগ নিতেন ফড়েরা। সরকারি উদ্যোগে যে ধান কেনা হয়, তার একটা বড় অংশ আসে কৃষি সমবায় সংস্থার মাধ্যমে। ইসিএসসি, বেনফেড, কনফেড প্রভৃতি সরকারি সংস্থাগুলি তাদের অধীনস্থ গ্রামীণ কৃষি সংস্থাকে দিয়ে অস্থায়ী শিবির খুলিয়ে ধান কেনে। আগে দেখা গিয়েছে, সমবায় সংস্থার মাধ্যমে ধান কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম হতো। ভুয়ো চাষিদের নাম নথিভুক্ত করে ধান কিনে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই চক্রে রাইস মিল মালিকদের একটা অংশ জড়িত থাকত বলেও অভিযোগ। কয়েক বছর আগে হাওড়ায় এই ধরনের ঘটনা ধরা পড়লে সিআইডি কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। প্রায় তিন হাজার ভুয়ো চাষির নামে ধান কেনা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। এসব আটকাতে এবার সমবায় সংস্থাগুলি আর চাষিদের নাম নথিভুক্ত করতে পারছে না। সরকারি কেন্দ্রে গিয়ে আধার নম্বর, জমির মালিকানার কাগজ সহ বিভিন্ন নথি দিয়ে চাষিদের নাম নথিভুক্ত করতে হচ্ছে। অতীতে অভিযোগ উঠেছিল, এমন সব সমবায় সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সব কড়াকাড়ি হওয়ায় এবার ফড়েদের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ ধান কেনা দেখিয়ে দেওয়া সহজে সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন খাদ্যদপ্তরের আধিকারিকরা। গতবারে এই সময়ে প্রায় ৫ লক্ষ টন ধান কেনা হয়ে গিয়েছিল। তবে ফড়েদের আটকানো ছাড়াও আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে এবারে প্রথম দিকে ধান কেনা কম হয়েছে বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা।