কাঁথির মাটিতেও কার্যত ফ্লপ শুভেন্দুর ডাকা অবরোধ কর্মসূচি
কলকাতা পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে রবিবার বেলা ১টায় রাজ্য জুড়ে অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অথচ সেই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিজেপি নেতাদের কালঘাম ছুটল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক পূর্ব মেদিনীপুরে। তা নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি সোমবার কাঁথিতে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জোড়াফুল শিবির। অন্য দিকে, আজকের দিনেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। বিজেপি-তে তাঁর এক বছর পূর্ণ হল। সেই ঘটনাকে কটাক্ষ করে কাঁথিতে মিষ্টিও বিতরণ করেন তৃণমূলকর্মীরা।
রবিবার দুপুরে বিজেপি-র অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয় জেলার কয়েকটি এলাকায়। বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপকুমার চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘কাঁথির সাতমাইল ছাড়া এগরাতেও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।’’ কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নিজের জেলাতেই তাঁর দলের কর্মসূচি সে ভাবে সাড়া ফেলল না কেন? অনুপের জবাব, ‘‘জেলা জুড়ে অবরোধে শামিল হতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি আরও কয়েকটি অবরোধ কর্মসূচি হবে।’’ দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে অবশ্য তমলুকের শংকরআড়া এলাকায় হলদিয়া-মেছেদা রাজ্য সড়কে জনা কয়েক বিজেপি কর্মী-সমর্থক কুশপুতুল পোড়ায়। পরে তমলুক থানা এলাকায় ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কেও অবরোধ কর্মসূচি হয়। বিকেলের দিকে কাঁথি শহরের পাশাপাশি হেঁড়িয়া এবং রামনগরেও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়।তা পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে না পেরে অশান্তির নাটক করছে বিজেপি। রবিবার বিজেপি-র নাম না করে এই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে বিজেপি। তবে বিরোধী দলের সে দাবি নাকচ করে দিয়েছেন মমতা। তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ ভাবে কলকাতায় পুরভোট হয়েছে।
রবিবার দুপুর ৩টে নাগাদ মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হচ্ছে।’’ পুরভোটে গন্ডগোল হচ্ছে বলে বিজেপি-র দাবি নস্যাৎ করেছেন তিনি। বিজেপি-কে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি ১৪৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারে, তা হলে তাঁরা নাটক করবে। ওদের পাত্তা না দেওয়াই ভাল। আমি খুশি যে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’
যদিও মমতার এ দাবি মানতে নারাজ রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দক্ষিণ দিনাজপুরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তাঁর দাবি, ‘‘আমরা এই নির্বাচনকে নির্বাচন বলেই মনে করছি না। সে পরিবেশ নেই। সব ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচন হওয়া উচিত!’’ কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য জুড়ে আমাদের প্রতিবাদ চলছে। যে ধরনের অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি বা পরিবেশ তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে কলকাতায়, তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা আগেও বলেছিলাম, কলকাতা পুলিশ তথা রাজ্য পুলিশকে দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ পুরভোট করানো সম্ভব নয়। সে জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরভোট করানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিলাম।’’ পুরভোটের শাসকদলের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সুকান্তর দাবি, ‘‘বোমা পড়লে পুলিশ বলছে, ‘চকোলেট বোমা।’ অথচ স্থানীয়েরা বলছেন যে বোমায় আঘাতে আহত হতে পারতাম। তবে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরা বলছেন, ‘এ নিয়ে তদন্ত হবে। কেউ তো মারা যাননি!’ এই হচ্ছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বোমার সংজ্ঞা। বুথে সিসিটিভি-র মুখ ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও বলা হচ্ছে যে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে!’’
বিজেপি ‘ছন্নছাড়া’ বলে খোঁচা দিয়েছে তৃণমূল। এ নিয়ে রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির কটাক্ষ, ‘‘দু’দিন আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হুঙ্কার দিয়ে রাজ্যকে অচল করে দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। অথচ আর আজ কাউকেই রাস্তায় দেখা গেল না। এর অর্থ স্পষ্ট, বিজেপি-র হালে পানি দেওয়ার জন্য কেউই অবশিষ্ট নেই।’’ পাশাপাশি অখিল জানিয়েছেন, গত বছর এই দিনেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আপদ বিদায়ের দিন হিসেবে কাঁথি শহরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।’’ সোমবার কাঁথিতে ‘গদ্দার হঠাও’ দিবস হিসাবে পালন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।