ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ই-কমার্স পোর্টাল ঘোষণা করেও পিছু হঠল মোদী সরকার
ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের পাশে দাঁড়াতে অনলাইন পোর্টাল তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রত্যন্ত এলাকার অল্প পুঁজির ব্যবসায়ীদের পণ্য বিক্রির লক্ষ্যেই ওই পোর্টাল চালু হবে, এমনটাই জানানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ই-কমার্স পোর্টালগুলি ভারতে যেভাবে দাপিয়ে ব্যবসা করছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতেই ‘সরকারি’ ই-কমার্স পোর্টাল খোলার কথা বলা হয়েছিল। সরকার তখন সদর্পে ঘোষণা করেছিল, কয়েক বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা করবে ওই ই-কমার্স। বছর দু’য়েক যেতে না যেতেই ‘ফুশ’ এই প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ। এবার নরেন্দ্র মোদী সরকার জানিয়ে দিল, ওই পোর্টাল চালু করার কোনও ইচ্ছা এখন নেই সরকারের!
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অল্প পুঁজির ক্ষুদ্র শিল্পই পথ দেখাবে। এমন কথা বারবার বলে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতেও বারবার ক্ষুদ্র শিল্পের হয়ে সওয়াল করেছেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন নীতিন গাদকারি ঘোষণা করেছিলেন, সরকার নিজেই একটি ই-কমার্স পোর্টাল গড়ে তুলবে। তার গালভরা নাম দেওয়া হয় ‘ভারত ক্রাফ্ট’। দেশের অন্যতম একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সেই ই-কমার্সের মূল কান্ডারি হবে, এমনটাই জানানো হয়। বলা হয়, কয়েক বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটির ব্যবসা করবে এই পোর্টাল। কাজ শুরু করার জন্য গড়া হয় একাধিক কমিটি। কীভাবে পোর্টাল ব্যবসা করবে, তার ব্লু-প্রিন্ট তৈরির কাজও এগিয়ে যায়। পরবর্তীকালে নীতিন গাদকারি বলেন, মন্ত্রক নিজে ওই পোর্টাল দেখভাল করবে না। তার ভার কোনও একটি বেসরকারি এজেন্সিকে দেওয়া হবে। পণ্য বিক্রির উপর কমিশনের ভিত্তিতে সেই পোর্টালে কাজ হবে। প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা যাতে দেশীয় বাজার ধরতে পারে, সেটাই হবে ওই পোর্টালের মূল লক্ষ্য। কিন্তু সম্প্রতি লোকসভায় বর্তমান কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী নারায়ণ রানে জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত ক্র্যাফ্ট তৈরি হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, তার কোনও কারণ জানাননি তিনি।
ই-কমার্স চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা থেকে সরে আসাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না শিল্পমহল। দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সর্বভারতীয় মঞ্চ ‘কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স’-এর সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ই-কমার্সের ব্যাপারে সরকার গোড়া থেকেই ভুল পদক্ষেপ করছে। কোনও রকম সুষ্ঠু নীতি ছাড়াই বিদেশি অনলাইন সংস্থাগুলিকে ব্যবসা করার দরজা খুলে দিয়েছে। ফলে শিল্পমহল এবং ক্রেতাদের যে সমস্যা হচ্ছে, তা দেখভালের কোনও কৌশল নেই। এমনকী, সংস্থাগুলির গুরুতর ভুলের জন্য কোনও বড় পদক্ষেপও করা যায়নি। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা যাতে নিজেরাই বিদেশি বৃহৎ পুঁজির সংস্থাগুলিকে টক্কর দিতে ই-কমার্স পোর্টাaল চালু করতে পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকার চাইলে কিন্তু তা করতে পারত। এদিকে, সরকার নিজেরাই পোর্টাল চালুর জন্য ভারত ক্রাফ্টের উদ্যোগ নিয়েছিল। সরকারের কাজ কখনই ব্যবসা করা হতে পারে না। তার কাজ অন্যকে ব্যবসা করার জন্য সাহায্য করা। অথচ সরকার বারবার এই ভুল করে আসছে। এখন তারা সেই পোর্টাল চালু করছে না ঠিকই। কিন্তু বিদেশি পুঁজির বদলে দেশীয় বাজারকে চাঙ্গা করার কোনও উদ্যোগ নিলে ভালো হতো।