সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোয় নেতাজির বিশেষ গুরুত্ব চায় মমতার সরকার
পাঁচটি বৈঠকের পরেও ফাইনাল হল না মডেল। নেতাজিকে পৃথক গুরুত্ব, নাকি এবারের থিম ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসবে’র মধ্যেই মিশে থাকতে হবে সুভাষচন্দ্রকে? দিল্লিতে ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো ইস্যুতে এই মর্মেই কেন্দ্রের সঙ্গে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। মডেল চূড়ান্ত করতে ফের ডাকা হয়েছে বৈঠক। রাজ্যকে দিতে বলা হয়েছে মডেলের আরও নকশা।
সংস্কৃতিমনষ্ক, সৃষ্টিশীল বাঙালির মস্তিষ্কে ভাবনার অভাব নেই। স্বাধীনতায় বাংলা-বাঙালির অবদান অপূরণীয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫ তম জন্মবর্ষ। তাই দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রকে সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোয় ‘বিশেষ’ গুরুত্বেই তুলে ধরতে চায় মমতার সরকার। কিন্তু রাজ্যের সেই উদ্যোগকে এখনও ছাড় দেওয়া হয়নি বলেই প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। হবে আরও আলোচনা। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সহ ১৮টি রাজ্যের ট্যাবলোর মডেল নিয়ে আলোচনা চলছে। বাকিরা বাদ। তাই রাজ্যও আশাবাদী।
উল্লেখ্য, সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোর ছাড়পত্র দেয় মন্ত্রকের তৈরি বিশেষজ্ঞদের বিশেষ কমিটি। প্রশ্ন উঠছে, গতবারের মতো এবারও সংস্কৃতিমন্ত্রক সুভাষচন্দ্রকে তাদের ট্যাবলোর মডেলে রাখতে চায় কি না? সেই কারণেই কি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে চলছে টানাপোড়েন? ওয়াকিবহাল মহলে উঠছে প্রশ্ন। ওদিকে, নেতাজির পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ, কাজি নজরুল, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো ব্যক্তিত্বদের অবদানের কথা তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোয় স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকা দেশবাসীকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেও বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড এবারও ধর্মীয় স্থানকেই আঁকড়ে ধরছে বলেই বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে। আগামী বছর ওই দুই রাজ্যেই ভোট। তাই সার্বিকভাবে সাধারণতন্ত্র দিবসে ট্যাবলোর থিম স্বাধীনতার ৭৫ বছর হলেও উত্তরপ্রদেশ সরকার নরেন্দ্র মোদীর হাতে উদ্বোধন হওয়া নতুন ‘কাশী করিডরে’র নকশা জমা দিয়েছে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরের মডেলই রাজধানীর রাজপথে প্রদর্শন করতে চায় যোগী সরকার। আর উত্তরাখণ্ড তুলে ধরবে কেদারনাথ চত্বর।
কিন্তু আদৌ কি এবার রাজপথে সাধারণতন্ত্রের প্যারেড আর ট্যাবলোর প্রদর্শনী হবে? শুরু হয়েছে সেই আলোচনাও। কারণ, ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা খরচে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’ প্রকল্পের কাজের জন্য ঐতিহাসিক রাজপথ লণ্ডভণ্ড। সেন্ট্রাল ভিস্তা এভিনিউয়ের (যা রাজপথের লাগোয়া অংশ) কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কৌশল কিশোর। কিন্তু মন্ত্রী যতই বলুন, সরকারের বিবৃতিতেই বলা হয়েছে কাজ হয়েছে মাত্র ৬০%। এদিকে, সাধারণতন্ত্র দিবসের আর বেশি দেরি নেই। এই অল্প সময়ের মধ্যে কি আগের অবস্থায় ফিরবে রাজপথ? নাকি, এবার অন্যত্র হতে পারে সাধারণতন্ত্রের সেলিব্রেশন? শুরু হয়েছে জল্পনা। কেউ কেউ তা লালকেল্লায় করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।