চার দফাতে ফেব্রুয়ারিতে বাকি পুরভোট? ঘোষণা শীঘ্রই
রাজ্যের বাকি পুরসভার নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই। তবে ছ’-আট নয়, ভোট হতে পারে চার দফায়। বিশেষ সূত্রে খবর, অন্তত এমনটাই চিন্তাভাবনা চলছে সরকারি উচ্চমহলে। পুরভোটের ক্ষেত্রে নির্ঘণ্ট স্থির করে রাজ্য সরকার। এবারও তার অন্যথা হবে না। কিন্তু এত আগে থেকে সেই ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরুর নেপথ্যে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি পুরভোটের দিনক্ষণ জানাতে হবে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। এর আগে রাজ্য সরকার মে মাসের মধ্যে ছ’-আট দফায় ভোট করার প্রস্তাব দিয়েছিল আদালতে। হাইকোর্ট অবশ্য তাতে আপত্তি তুলেছে।
কলকাতা, হাওড়ার পাশাপাশি রাজ্যের আরও ১১১টি পুরসভায় নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। হাওড়া পুরসভার নির্বাচন-ভাগ্য ঝুলে রয়েছে রাজভবনে। কারণ, হাওড়া পুরসভার সংশোধনী বিলটি রাজ্যপাল এখনও আটকে রেখেছেন। তাই কলকাতার পুরভোট শেষ হতেই বাকি ১১১টি পুরসভার ভোট নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে বলেছেন, দু’-এক মাসের মধ্যে ভোট হয়ে যাবে। নবান্নের যুক্তি, শীতের মধ্যে ভোট হলে কষ্ট অনেক কম হয়। তাই ঠান্ডার আমেজ থাকতেই নির্বাচন করার পক্ষে রাজ্য সরকার। কিন্তু করোনার কারণে একসঙ্গে নয়, কয়েক দফায় ভোটগ্রহণ হওয়াই ভালো। বিধানসভার ভোট আট দফায় হলে, পুরভোটে চার-পাঁচ দফায় ক্ষতি কী? সেই অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একটি মহলে চর্চা তুঙ্গে। কিন্তু সোমবার সরকার ও কমিশনের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, নতুন ভোটার তালিকার উপর ভিত্তি করে হবে পুর নির্বাচন। আর তা প্রকাশিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। তারপর বিভিন্ন পুরসভার ওয়ার্ড ধরে ভোটার তালিকা তৈরি করতেও সময় লাগবে কয়েকদিন। আবার আইন অনুযায়ী, ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি ও নির্বাচনের দিনের মধ্যে ন্যূনতম ২৪ দিনের ব্যবধান থাকা প্রয়োজন। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসের আগে বাকি পুরভোট হওয়া কার্যত অসম্ভব।
আরও কিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সরকারি ছুটি। ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ এবং ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস। আবার গঙ্গাসাগর মেলা রয়েছে। সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের কর্মসূচি ‘দুয়ারে সরকার’ও দু’দফায় হওয়ার কথা জানুয়ারি মাসে। প্রথম দফায় ২ থেকে ১০ জানুয়ারি, আর দ্বিতীয় দফায় ২০ থেকে ৩০ জানুয়ারি রাজ্যের সর্বত্র হবে এই শিবির। ‘দুয়ারে সরকার’ থেকে ২০টি প্রকল্পের সুবিধা পাবেন সাধারণ মানুষ। তাই জানুয়ারি মাস ভোট করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসুবিধাজনক।
অন্যদিকে, মার্চ-এপ্রিল মাসে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সহ একাধিক পরীক্ষা রয়েছে। গরমও পড়তে শুরু করবে। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাস ভোট করার ক্ষেত্রে আদর্শ সময় বলে মনে করছেন কমিশনের কর্তারা। তাঁদের ধারণা, রাজ্যে যে সংখ্যক পুরসভা বকেয়া রয়েছে, তার ভোট করাতে গেলে কমপক্ষে চার দফা করা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি পুরসভার নির্বাচন বকেয়া উত্তর ২৪ পরগনায়। তাই সেই জেলা থেকেই শুরু হবে ভোটগ্রহণ। এছাড়া রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে ১৫ হাজার ইভিএম আছে। তা দিয়ে একদফায় ১১১টি পুরসভার ভোট করা সম্ভব নয়।