বাড়েনি দাম, করোনার সঙ্কট কাটিয়ে অনেকটাই চাঙ্গা কেকের বাজার
সামনেই বড়দিন। জাঁকালো শীতে টইটম্বুর উৎসবের আমেজ সর্বত্র। ধীরে ধীরে জমে উঠেছে কেকের পসরা। ছোট বেকারিগুলির হাল খুব একটা ভাল না হলেও অপেক্ষাকৃত বড় কেক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বলছে, করোনার সঙ্কট কাটিয়ে অনেকটা চাঙ্গা হয়েছে কেকের বাজার। দাম বাড়ানোর পথে সেভাবে না হেঁটে সর্বসাধারণের জন্য উৎসবের স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ করে দিতে চাইছেন তারা।
করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে অনেকটাই ছন্দে ফিরেছে কেকের বাজার, বলছেন ‘মিও আমরে’ ব্র্যান্ডের মূল সংস্থা সুইৎজ ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার শিখরেশ সাহা। তিনি বলেন, আমরা কেকের দাম বাড়াইনি বললেই চলে। কিন্তু পুরনো স্বাদের কয়েক রকমের কেকে কিছু অদলবদল করা হয়েছে। তাতে স্বাদ আরও বেড়েছে। ক্রেতারাও আগের থেকে বেশি খুশি হবেন, এমনই আশা রাখি। করোনার আগে, অর্থাৎ ২০১৯ সালের ক্রিসমাস-নিউ ইয়ারে যে বাজার পাওয়া গিয়েছিল, এবার বাজার তার চেয়ে অনেকেই ভালো। প্রায় ২০ শতাংশ ব্যবসা বাড়ানো গিয়েছে। করোনার কারণে বহু সংস্থা খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হয়েছে বাধ্য হয়েই। সেখানে সবাইকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সংস্থা। এমনকী দোকানগুলিও যাতে তাদের কর্মচারীদের রেখে দিতে সক্ষম হয়, তার চেষ্টাও করা হয়েছে। ডিসকাউন্ট বা ছাড়ের হার বাড়ানো হয়েছিল।
তবে শুধু ফ্রুট বা প্লাম কেকের বাজারই এই সময় বাড়ে, তা নয়, জানিয়েছেন শিখরেশবাবু। তাঁর কথায়, বহু মানুষ আছেন, যাঁরা ফ্রেশ ক্রিম ছাড়া কেক পছন্দ করেন না। তাঁদের জন্য এই সময় বার্থডে কেকের চাহিদাও অনেকটা বেড়ে যায়। এই সময় অন্তত চার গুণ ব্যবসা করে ফ্রেশ ক্রিমের বড় কেক। মিও আমরে’র স্পেশাল স্ন্যাকস বা অন্যান্য খাবারগুলির চাহিদাও এই উৎসবের মরশুমে অনেকটা বেড়ে যায়। এই মুখোরোচক খাবারগুলির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
কাঁচামালের দাম আকাশছোঁয়া। তবু নামে মাত্র দাম বাড়িয়েছে বাঙালির নস্টালজিয়ার কেক ‘বাপুজি’। এই প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ণধার অমিতাভ জানার কথায়, যেভাবে ডিজেলের দাম বেড়েছে, তার সঙ্গে আমরা পাল্লা দিতে পারছি না। ডেলিভারি সহ সর্বস্তরে তার প্রভাব পড়েছে। সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে ঠিকই কিন্তু বনস্পতি সহ ভোজ্য তেলের দাম দেড় গুণ চড়েছে। আমরা কঠিন সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি। পাঁচ থেকে সাত শতাংশ দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। বড়দিনের কেকের দামও বেড়েছে। কিন্তু কচিকাঁচাদের কথা মাথায় রেখে টিফিন কেকের দাম বাড়াইনি। হয়তো আমরা আগামী দিনে তারও দাম বাড়াতে বাধ্য হব। করোনা সঙ্কট কাটিয়ে অন্তত বড়দিনের কেকের বাজার ছন্দে ফিরেছে বলে জানাচ্ছেন অমিতাভবাবুও। তিনি বলেন, স্কুলগুলি বন্ধ থাকায় টিফিন কেক বিক্রি কমেছে। মোট বিক্রির নিরিখে অন্তত ৪০ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছি আমরা। কিন্তু বড়দিন ও নিউ ইয়ারের বাজার আমাদের আশা জোগাচ্ছে।
তবে কেকের বাজার রাজ্যের সবক্ষেত্রে যে আশাব্যঞ্জক এমনটা নয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ছোট বেকারিগুলির অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। তার অন্যতম কারণ কাঁচামালের দাম। কিন্তু এই বাজারে দাম না বাড়িয়ে কেক বিক্রি করছে অনেকেই। এখন সবাই কেক তৈরি করছে বটে তবে এবছর আমরা নিজেদের বাজার পাচ্ছি না। তারই মধ্যে বাইরের রাজ্যের কেক এসে কলকাতা ও জেলার বাজার খেয়ে নিচ্ছে। আমরা কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে। বাইরের রাজ্যের কেক এখানকার বাজারে আসছে। সবমিলিয়ে লাভ প্রায় নেই। এই রাজ্যের কেক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে নজর দিতে অনুরোধ জানাচ্ছে বেকারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। তাঁদের যুক্তি, যেখানে মিষ্টি সহ বেশ কিছু খাবারের জিএসটি পাঁচ শতাংশ, সেখানে কেক কেন ১৮ শতাংশের খপ্পরে পড়বে। তাঁদের বক্তব্য, করোনার দুর্দিনে ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়নি। এদিকে বাজারও নেই। এই পরিস্থিতিতে তো কিছু আর্থিক সুরাহা পেতেই পারতেন তাঁরা। সাধারণ ক্রেতারা উৎসবে মাতুন, আরও বেশি করে কেক কিনুন, এটাই চান সবাই।