সৃজিতের নতুন ছবিতে এবার গিরিশ ঘোষের চরিত্রে ব্রাত্য, বিনোদিনী প্রিয়াঙ্কা
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-তে এবার নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষের চরিত্রে দেখা যাবে মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। তবে স্রেফ রাজ্যের ‘মন্ত্রী’র বেড়াজালেই আটকে রাখা যাবে না তাঁকে। একইসঙ্গে তিনি একজন প্রখ্যাত নাট্যকার এবং অভিনেতাও। উল্লেখ্য, এর আগে সৃজিতের পরিচালনায় ‘হেমলক সোসাইটি’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ব্রাত্য। অন্যদিকে, ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে নটি বিনোদিনীর ভূমিকায় দর্শকদের সামনে হাজির হবেন প্রিয়াঙ্কা সরকার।তবে মাস কয়েক আগে এই ছবিতেই লক্ষীপ্রিয়ার চরিত্রে নাম ঘোষণা হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার। জানা গেছে, ‘ক্রিয়েটিভ ডিসিশন’ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পরিচালক এবং ছবির টিমের তরফে। অন্যদিকে, সৃজিতের নির্দেশে এই ছবিতেই ‘গৌরাঙ্গ’ হয়ে উঠছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যও।
নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষের চরিত্রে অভিনয়ের প্রসঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমসকে ব্রাত্য বসু জানালেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে।দীর্ঘদিন বাদে সৃজিতের মতো সৃজনশীল পরিচালকের সঙ্গে কাজ করব। একে ও আমার কলেজের জুনিয়র, তদুপরি এই সময়ের সবথেকে সেনসেশনাল পরিচালক। তাই এই সুযোগ পেয়ে আমি খুবই খুশি। তার ওপর গিরিশচন্দ্র ঘোষের মতো একজন ঐতিহাসিক চরিত্র। খুবই উত্তেজিত লাগছে।’ তা এই চরিত্রের জন্য কী রকম প্রস্তুতি নেবেন তিনি? সে জবাবও দিয়েছেন ব্রাত্য বসু , ‘নিজের একটি লেখার জন্য উনিশ শতকের থিয়েটার নিয়ে সম্প্রতি কিছু পড়াশোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। আশা করছি এই চরিত্রায়নে সেটা এবার কাজে লাগবে।’ কথা শেষে সৃজিত ও প্রযোজক রানা সরকারের উদ্দেশে শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন তিনি।
আর সৃজিত তিনি এ ব্যাপারে কী বলছেন? হিন্দুস্তান টাইমসকে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই পরিচালক খোলাখুলি বললেন, ‘অভিনেতা ব্রাত্য বসুর অনেক আগে আমাকে প্রভাবিত করে ওঁর নাটক। এরকম একজন প্রসিদ্ধ নাট্যকারকেই যে আমি গিরিশ ঘোষের চরিত্র প্রস্তাব করতে পেরেছি এই সমাপতন একইসঙ্গে খুবই আশ্চর্যের এবং আনন্দের। ব্রাত্যদার অগাধ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা এই চরিত্রায়ণে অসম্ভব সাহায্য করবে বলেই আমার ধারণা।’
অন্যদিকে, ‘লক্ষীপ্রিয়া’ থেকে ‘নটি বিনোদিনী’র ভূমিকায় প্রিয়াঙ্কা সরকারের পা রাখার ব্যাপারেও স্পষ্ট ভাষায় নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন সৃজিত। বললেন, ‘দেখুন, প্রিয়াঙ্কা আমার খুব পছন্দ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। এবং অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর প্রতিভা ও কোনও চরিত্রের জন্য কঠিন পরিশ্রম করার ক্ষমতার ব্যাপারে আমি ওয়াকিবহাল। তাই আমি নিশ্চিত নটি বিনোদিনীর চরিত্রে সে খুবই ভালো কাজ করবে।’
আসলে, অনেক দিন ধরেই শ্রীচৈতন্যকে নিয়ে ছবি করার পরিকল্পনা ফেঁদে রেখেছেন সৃজিত। সেই ছবির প্রযোজকের দায়িত্বে রয়েছেন ‘জাতিস্মর’ ছবি খ্যাত রানা সরকার। হিন্দুস্তান টাইমসকে এই ছবি প্রসঙ্গে রানা বললেন, ‘ছবিতে শ্রীচৈতন্যর জীবনের বড় একটা অংশ তো থাকবেই তার সঙ্গে থাকবে চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান রহস্যর খুঁটিনাটি বিষয়ও। তবে পুরোপুরি পিরিয়ড ফিল্ম হবে না এই ছবি। আর অনির্বাণ এই ছবিতে অবশ্যই রয়েছেন অন্যতম মুখ্যভূমিকায়। তবে মহাপ্রভু হিসেবে নয়। অনির্বাণের চরিত্রটি ছাড়া এই ছবি অসম্পূর্ণ এটুকু বলতে পারি আমি।’ কেন এই ছবি পিরিয়ড ফিল্ম হবে না সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য এখনই জানাতে নারাজ তিনি।
প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, এর আগে সৃজিতের নির্দেশনায় ‘হেমলক সোসাইটি’ এবং ‘রাজকাহিনী’-তে কাজ করেছেন তিনি। তাই ফের একবার সৃজিতের ছবিতে কাজ করতে পেরে যথেষ্ট উত্তেজিত তিনি। অভিনেত্রীর কথায়,’ হাতে বেশ কিছুটা সময় পাচ্ছি এই ছবি শুরুর আগে, তখন নিজেকে প্রস্তুত করে নেব। নটি বিনোদিনীর চরিত্রটির ব্যাপ্তি এতটাই যে ফাঁকি দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। চরিত্রটির গভীরে ঢোকার জন্য আরও পড়াশোনা করব।’
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকেই এই ছবির শুটিং শুরু করে দেবেন সৃজিত। নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের বিভিন্ন ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘গুমনামী’ ছবি যে তুফান তুলেছিল বক্স অফিস থেকে শুরু করে বসু পরিবার পর্যন্ত, তার স্মৃতি আজও দর্শকদের মনে টাটকা। এবার শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে কী বিস্ফোরণ ঘটাতে চলেছে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’, তা বলবে সময়ই।