বস্ত্রশিল্পে জিএসটি বাড়ানোর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে অনিশ্চিত ১৫ লক্ষ কাজ!
এক হাজার টাকার কম দামের পোশাকের উপর জিএসটির হার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই সেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গিয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম চালু হওয়ার কথা। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশে কমপক্ষে এক লক্ষ পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থদপ্তরের মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্র। এতে কাজ হারাতে পারেন ১৫ লক্ষ মানুষ। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তড়িঘড়ি জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ডাকার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
সুতি বা প্রাকৃতিক উপাদান নয়, এমন বস্ত্রের উপর বর্তমানে জিএসটির হার ১৮ শতাংশ। যেখানে সিন্থেটিক কাপড়ের উপর এই হার প্রযোজ্য, সেখানে জিএসটির হিসেবে ভারসাম্য আনতে সুতো ও অন্যান্য বস্ত্রের উপর ১২ শতাংশ হারে জিএসটি আরোপ করার পথে কেন্দ্র। এতে তারা বাড়তি সাত হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। যদিও অমিতবাবুর দাবি, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশে বস্ত্র শিল্প ব্যবসা করে প্রায় ৫.৪ লক্ষ কোটি টাকার। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্যবসা আসে সুতো, পাটের মতো প্রাকৃতিক উপাদান থেকে। এই ব্যবসায় লাভের হার এক থেকে তিন শতাংশের বেশি নয়। সরকার এই শিল্প থেকে মোট রাজস্ব আদায় করে বছরে ১৯ থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা, যার মাত্র দু’শতাংশ আসে জিএসটি বাবদ। অর্থাৎ জিএসটি থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অতি সামান্য। কিন্তু সরকার যদি এক ধাক্কায় সেই হার সাত শতাংশ বাড়িয়ে দেয়, তাহলে অন্তত এক লক্ষ ইউনিট বা সংস্থা তাদের ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। তাতে জিএসটি আদায় অনেকটাই কমবে। আবার শুধু বাড়তি করের বোঝা এড়াতে বহু সংস্থা ফের কর ফাঁকির রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। তারা জিএসটি রেজিষ্ট্রেশন আবার বন্ধ করবে। তাতেও সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে। সব মিলিয়ে সরকারের লোকসান বই লাভ হবে না, এমনটাই বুঝিয়েছেন অমিতবাবু। তিনি বলেন, সংস্থা বন্ধ হলেও চাহিদা বজায় থাকে। তার বাজার নেবে আমদানি করা পোশাক। সেক্ষেত্রেও বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাবে। তাতেও সরকারের ক্ষতি। অমিতবাবুর দাবি, গোটা দেশের সঙ্গে সুরাত ও লুধিয়ানার বস্ত্রশিল্প সংস্থাগুলি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র সেসবের তোয়াক্কা না করেই নতুন জিএসটির হার ঘোষণা করেছে। এমনকী জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকেও এনিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি। অমিতবাবুর উদ্বেগ, যেখানে শুধু ফুলিয়ায় ৭০ হাজার তাঁতি আছেন, সমুদ্রগড়ে ৫৫ হাজার, সেখানে সহজেই অনুমেয়, বাংলায় এই সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলবে। মেটিয়াবুরুজে এখন পোশাক শিল্পে বার্ষিক ব্যবসা হয় ২০ হাজার কোটি টাকার। সেখানেও পরিস্থিতি খারাপ হবে, আশঙ্কা তাঁর।