নতুন বছর থেকে জমির খাজনা জমা দেওয়া যাবে অনলাইনে
নতুন বছরে মিলবে নতুন পরিষেবা। রাজ্যবাসীকে উপহার নবান্নের। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে ঘরে বসে স্মার্টফোনের এক ক্লিকেই জমা দেওয়া যাবে অকৃষি জমির খাজনা। পুরোপুরি অনলাইনে। শুধু খাজনার কারণে আর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে হত্যে দিতে হবে না। কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকা মানুষ দেশ কিংবা বিদেশে বসেই তা মিটিয়ে দিতে পারবেন। এই পরিষেবা পেতে ‘বাংলার ভূমি’ ওয়েবসাইটে প্রথমে নিজের নাম ও তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেখানেই অকৃষি জমির খাজনার টাকা জমা দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। নতুন ব্যবস্থার বিষয়ে জেলায় জেলায় মাস্টার ট্রেনারদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে নবান্ন। পরিষেবাটি চালু হলে রাজ্য সরকারের আর্থিক কাঠামো আরও মজবুত হবে।
তৃতীয়বার রাজ্যের শাসনভার হাতে নেওয়ার আগে থেকেই পরিষেবা ক্ষেত্রকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, সরকারের কাছে আপনাকে আর যেতে হবে না। সরকার নিজেই আসবে আপনার কাছে। নাগরিক পরিষেবায় লাল ফিতের ফাঁস আলগা করা, দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে যাবতীয় প্রয়োজন মেটানো এবং অনলাইন ব্যবস্থা চালু করে সেই বাম জমানা থেকে রমরমিয়ে চলা দালালরাজ বন্ধ—এই সবই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুকুটে একের পর এক পালক। পাশাপাশি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করে গৃহকর্ত্রীদের ভরসাও জুগিয়েছেন তিনি। তাঁদের সম্মানার্থেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নথিভুক্ত হয়েছে বাড়ির মহিলা সদস্যের নামে। বাকি ছিল জমির খাজনা দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের অসুবিধা। সেটাও এই জানুয়ারি থেকে মিটিয়ে দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগেই রাজ্যের সব কৃষি জমির খাজনা মকুব করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু বাস্তু বা ব্যবসায়িক জমির ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আগে এই খাজনা সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক রাজস্ব পরিদর্শক ও ভূমি সহায়ক। কিন্তু দীর্ঘদিন এই সব পদে নিয়োগ না হওয়ায় কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল। তাই বছরে একবার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের উদ্যোগে গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায় খাজনা সংগ্রহের শিবির করা হয়। আবার সরাসরি ব্লক অফিসে এসেও তা জমা দেওয়া যায়। কিন্তু তার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি রয়েছে। আবার কেউ কাজের সূত্রে বাইরে থাকলে, তার পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে খাজনা মেটানো ছিল যথেষ্ট অসুবিধাজনক। ফলে বছরের পর বছর ধরে বাকি পড়ে রয়েছে অনেকের টাকা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য অনলাইনে খাজনা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা আনতে চলছে রাজ্য সরকার।
কীভাবে জমা দিতে হবে টাকা? প্রথমে ইন্টারনেটে ‘বাংলার ভূমি’ পোর্টালে ঢুকে সিটিজেন সার্ভিসে লগ ইন করতে হবে। সেখানে পাবলিক রেজিস্ট্রেশন ফর্মে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও ই-মেল অ্যাড্রেস লেখার জায়গা রয়েছে। এরপর জমির মৌজা, দাগ ও খতিয়ান নম্বর দিলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় কোন ব্যক্তির কত খাজনা বাকি, তা দেখা যাবে। সেখানে অনলাইনে টাকা জমা দিলে মিলবে রসিদ। খাজনার রসিদ হারিয়ে গেলেও কোনও ঝক্কি পোহাতে হবে না। কারণ, এই ওয়েবসাইটে নিজের ইউজার আইডি দিয়ে ঢুকলে আগের দেওয়া খাজনার হিসেবনিকেশ জানা যাবে। বিভিন্ন জেলার একাধিক ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসের পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থা সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কর্মীদের। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে ঘুঘুর বাসা ভাঙতে অনলাইন ব্যবস্থাকে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে অনলাইনে জমির মিউটেশন, রেকর্ড ও কনভার্সনের আবেদন করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এমনকী ই-ভূচিত্র অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লকের জমির রেকর্ডের তথ্য পর্যন্ত এখন সাধারণ মানুয়ের হাতের মুঠোয়। নতুন বছরে নয়া অনলাইন পরিষেবায় রাজ্যবাসীর হয়রানি আরও কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে।