আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

প্রয়াত কিংবদন্তি আর্চবিশপ টুটু, শোকের ছায়া সারা বিশ্বে

December 26, 2021 | 2 min read

নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে প্রথম মাসেই এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই এই মাটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে, যেমন জড়িয়ে থাকে প্রিটোরিয়ার বিখ্যাত জাকারান্দা গাছ এবং বুশভেল্ডের মিমোসা গাছ— রামধনু দেশ আজ শান্তিতে আছে, নিজের সঙ্গে এবং বিশ্বের সঙ্গে।’

ম্যান্ডেলা যে রামধনু দেশের গর্বে গর্বিত, সেই নতুন দেশের জন্মে বড় ভূমিকা ছিল ডেসমন্ড টুটুর। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন নতুন গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হল, বর্ণবৈষম্যকে দূরে সরিয়ে, সেই সময়েই টুটু দেশটার নামকরণ করেন ‘রেনবো নেশন’। সেই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ডাকনাম বেশ জনপ্রিয় সারা বিশ্বে।

রবিবার ৯০ বছর বয়সে কেপটাউনের ওয়েসিস ফ্রেইল কেয়ার সেন্টারে প্রয়াত হলেন আর্চবিশপ টুটু। সারা বিশ্ব তাঁকে শান্তি ও সাম্যের দূত হিসেবেই চেনে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া দক্ষিণ আফ্রিকায়। ম্যান্ডেলার মতোই তিনি জনপ্রিয় ছিলেন আফ্রিকার সবচেয়ে দক্ষিণের এই দেশে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, ‘আর্চবিশপ টুটুর প্রয়াণ আমাদের দেশের সেই অসাধারণ প্রজন্মকে বিদায় জানানোর এক শোকস্তব্ধ অধ্যায়।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের একাধিপত্য খর্ব করে, কৃষ্ণাঙ্গদেরও সমান অধিকার চেয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। নতুন রূপে জন্ম নেওয়া দেশে প্রথম প্রেসিডেন্ট তিনিই। শ্বেতাঙ্গদের দখলদারি থেকে বেরিয়ে সার্বিক গণতন্ত্র তৈরিতে ম্যান্ডেলার স্বপ্নকে সফল করায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন টুটু। শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যালঘু ছিল সে দেশে। তবু দক্ষিণ আফ্রিকার সব আইন তৈরি হত সাদাদের জন্যই। কালোদের জন্য থাকত বঞ্চনা। বাসে ওঠা থেকে রেস্তোরাঁয় ঢোকা—সবেতেই বৈষম্যের শিকার হতেন দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গরা। তার বিরুদ্ধেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন টুটু। তাঁর কাজের স্বীকৃতিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে।

প্রেসিডেন্ট রামাফোসার কথায়, ‘টুটু ছিলেন, আধ্যাত্মিক নেতা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও সারা বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার প্রচারক।’ টুটু শুধু খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতেন না। খ্রিস্টানদের উদ্বুদ্ধ করতেন সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে। মনে করতেন, ধর্মের আসল চর্চা হবে কাজের মাধ্যমেই। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে থিওলজি পড়েছিলেন তিনি। তাঁর ভাবনা ছিল অনেক সংস্কার মুক্ত।

বেশিরভাগ ধর্ম প্রচারকরাই সমকামীদের মান্যতা দেন না। খ্রিস্ট ধর্মের যাজকদের মধ্যেও তার অন্য রকম কিছু দেখা যায় না। টুটু ব্যতিক্রমী ছিলেন এখানেও। সমকামীদের অধিকার রক্ষায় সরব ছিলেন তিনিও। এ জন্য অ্যাংলিকান চার্চের সঙ্গে বিরোধে যেতেও পিছপা হননি। টুটু লিখেছিলেন, ‘অ্যাংলিকান হওয়ায় আমি লজ্জিত।’ সমকামীরাও নিজেদের চেনাতে, তাঁদের আন্দোলনে রামধনু রঙের পতাকা ব্যবহার করেন। দেশের মতো এই রামধনু রঙের অধিকার রক্ষাতেও সচেষ্ট ছিলেন টুটু। তাঁর নিজের মেয়ে মফো টুটু বিয়ে করেছিলেন এক মেয়েকেই। নেদারল্যান্ডসে সেই বিয়েতে টুটু হাজির থেকে মেয়েকে আশীর্বাদ করেছিলেন।

তাঁর নামে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে ডেসমন্ড টুটু এইচআইভি ফাউন্ডেশন। এইডস যাতে না ছড়িয়ে পড়ে, তার প্রচার করে সংস্থা। এই সংস্থার কাছে এইচআইভি টেস্ট করার একটি ব্যবস্থা আছে, যার নাম টুটু টেস্টার। যা নিয়ে কর্মীরা বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে এইডসের পরীক্ষা করতে পারেন। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন দ্বন্দ্বের শান্তি চাইতেন, সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন আমেরিকার ইরাক আক্রমণের।
নিপীড়িত, বঞ্চিতদের পাশে বরাবর দাঁড়িয়েছেন টুটু। তাই জনপ্রিয়ও ছিলেন খুব। তিনি চলে গেলেও তাঁর অগণিত ভক্তের মধ্যে থেকে গেলেন এক অন্য দৃষ্টিতে। যে দৃষ্টিতে সাদা-কালো, অসম বা সমকামী—সবাই মানুষ, সবাই সমান। টুটুর বেঁচে থাকবেন এই সব ভক্তদের মধ্যেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Archbishop Tutu, #Desmond Tutu, #RIP

আরো দেখুন