পিএম কিষানে ফের বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা বাংলার কৃষকদের
গতবারের মতো এবারও নাম পাঠানো সত্ত্বেও রাজ্যের বহু কৃষক ‘পিএম কিষান সম্মান নিধি’ প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে রাজ্য সরকারের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের ওই প্রকল্পে রাজ্যের নথিভুক্ত কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৪২ লক্ষ বলে রাজ্য কৃষিদপ্তরের কাছে খবর এসেছে। কিষান নিধি প্রকল্পের ওয়েবসাইটেও এই সংখ্যা রবিবারও ৪১ লক্ষ ৭৩ হাজার দেখানো হচ্ছে। যেখানে রাজ্য থেকে প্রায় ৫৫ লক্ষ কৃষকের নাম এই প্রকল্পের জন্য গিয়েছে বলে রাজ্যের কৃষিদপ্তরের পরামর্শদাতা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রায় ৭৬ লক্ষ কৃষক রাজ্য সরকারের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে বছরের দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিনে কিষান নিধি প্রকল্পের চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় কিস্তির টাকা নথিভুক্ত কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রক্রিয়ার সূচনা করতে পারেন। প্রদীপবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারি টাকা দেওয়া হবে কি না সে-ব্যাপারে তাঁদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। টাকা পাঠালে বোঝা যাবে রাজ্যের কতজন কৃষক অনুদান পেলেন। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের প্রকল্পে প্রতি আর্থিক বছরে ২ হাজার টাকার ৩ টি কিস্তিতে মোট ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে দুই কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।
গত আগস্ট মাসে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য কৃষিদপ্তর আগেই জানিয়েছে, আগের বার প্রায় ১২ লক্ষ নথিভুক্ত কৃষক টাকা পাননি। মোট ৩৬ লক্ষ কৃষকের নাম কেন্দ্রের পিএফএমএস পোর্টালে নথিভুক্ত ছিল। এই পোর্টালে নথিভুক্ত হলে টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু দেওয়া হয় ২৪ লক্ষ কৃষককে। এই বিষয়টি লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানায় রাজ্য কৃষিদপ্তর।
রাজ্যের কৃষকরা যাতে আরও বেশি সংখ্যায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পান তার জন্য রাজ্য কৃষিদপ্তর বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। তাই ৫৫ লক্ষ কৃষকের নাম নথিভুক্ত করে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রের প্রকল্পে শুধু জমির মালিক কৃষকরা অর্থ পান। যেখানে রাজ্যের প্রকল্পে ভাগচাষিরাও আর্থিক অনুদান পাওয়ার যোগ্য।
কেন্দ্রের প্রকল্পে কিছু বিশেষ শ্রেণি জমির মালিক কৃষক হলেও আর্থিক অনুদানের জন্য বিবেচিত হন না। যেমন আয়করদাতা, গ্রুপ ডি ছাড়া অন্যান্য পদের সরকারি কর্মী, ১০ হাজার টাকার বেশি পেনশন প্রাপক, ডাক্তার-আইনজীবী সহ অন্যান্য পেশাদার ব্যক্তি, মন্ত্রী, বিধায়ক-এমপি প্রভৃতিরা আর্থিক অনুদান পান না। রাজ্যের পক্ষ থেকে আগেই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়েছিল জমির মালিকদের যাচাই করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, আবেদনকারীদের কাছ থেকে স্ব-ঘোষণাপত্র নিতে যে তাঁরা বিশেষ শ্রেণিগুলির মধ্যে পড়ছেন না। এই পদ্ধতিতে স্ব-ঘোষণপত্র নিয়ে কৃষকদের নাম নথিভুক্ত করে অনলাইনে কেন্দ্রের পোর্টালে পাঠিয়েছে রাজ্য কৃষিদপ্তর। কেন্দ্রীয় সরকার তারপর তা যাচাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করছে। কিন্তু পিএফএমএস পোর্টালে নথিভুক্ত হওয়ার পরও রাজ্যের বহু কৃষক কেন বঞ্চিত হচ্ছেন সেটা বুঝতে পারছে না রাজ্য কৃষিদপ্তর।