দীঘায় কাঁকড়া খেয়ে ঘন ঘন বিপত্তি, খাবারের মান যাচাই করবে প্রশাসন
এক মাসের ব্যবধানে কাঁকড়া খেয়ে দীঘায় পরপর দুই পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। দীঘার হোটেল, রেস্তরাঁ ও সি-বিচের ধারে অস্থায়ী খাবারের দোকান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দীঘায় পর্যটকদের জন্য বিক্রি হওয়া খাবারের গুণগত মান যাচাই করতে গড়া হল নয় সদস্যের কমিটি। সেই কমিটিতে রামনগর-১ বিডিও ও জয়েন্ট বিডিও ছাড়াও রামনগর, দীঘা, দীঘা মোহনা কোস্টাল ও মন্দারমণি কোস্টাল থানার ওসি, রামনগর-১ বিএমওএইচ, ফুড সেফ্টি অফিসার এবং পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রয়েছেন। ১জানুয়ারি পর্যন্ত দীঘা-মন্দারমণিতে উৎসবের পরিবেশ থাকবে। এই কয়েকটা দিন অপেক্ষার পর ৩ বা ৪জানুয়ারি থেকেই ওই কমিটি দীঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর ও মন্দারমণিতে হোটেল, রেস্তরাঁ এবং সি-বিচ বরাবর বিভিন্ন অস্থায়ী খাবারের দোকানে হানা দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে। সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় ল্যাবে পাঠানো হবে।
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, দীঘার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁ বা খোলা জায়গায় বিক্রি হওয়া খাবারের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য বিশেষ কমিটি গড়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে খাবারের গুণগত মান যাচাই করা হবে।
দীঘায় মেরিন ড্রাইভের রাস্তা বরাবর খোলা জায়গায় সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া ভেজে বিক্রি করা হয়। তাতে রং মাখিয়ে দৃশ্যত লোভনীয় করা হয়। কিন্তু, কাঁকড়া ভাজার আগে ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ।
গত ২০নভেম্বর দীঘা বেড়াতে এসে একটি রেস্তরাঁয় কাঁকড়ার তরকারি খেয়ে বেহালার পর্যটক সৌম্যদীপ শিকদারের মৃত্যু হয়। তারপর গত ২৩ডিসেম্বর রাতে বীরভূম জেলার রামপুরহাটের হাটতলা এলাকার মাত্র ১৯বছর বয়সি দীপিকা ভকত কাঁকড়া খেয়ে মারা যান। কাঁকড়া খাওয়ার পর অ্যালার্জি থেকেই দুই পর্যটকের বিষক্রিয়াজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
দীঘার কিছু হোটেলে মাঝেমধ্যে বাসি, অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। দিনের দিন মাছ, মাংস বিক্রি না হলে সেটা পরের দিন পাতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পর্যটকরা হামেশাই এধরনের অভিযোগ তোলেন। এতদিন এসব নিয়ে বিশেষ নজরদারি ছিল না। কিন্তু, প্রায় এক মাসের ব্যবধানে দুই পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। খাবারের গুণগত মান যাচাই করার জন্য গঠিত কমিটি যে কোনও হোটেল, রেস্তরাঁ বা স্ট্রিট ফুডের দোকানে হানা দিতে পারবে। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবে পাঠাবে। তাতে গুণগত মান খারাপ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুণগত মান নিয়ে কোনও আপস হবে না বলে সাফ জানান রামনগর-১বিডিও বিষ্ণুপদ রায়।এদিন ওল্ড দীঘার বিশ্ববাংলা উদ্যান ঘুরে দেখছিলেন ময়না থানার সুদামপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ গুছাইত ও বারাসত থেকে আসা অমলেন্দু বিশ্বাস। তাঁরা বলেন, দীঘায় খাবারের মান যাচাইয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসেন। তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। যেখানে সেখানে খাবারের দোকান গজিয়ে উঠছে। যে কারণে স্ট্যান্ডার্ড রেস্টুরেন্টে স্বাভাবিক বিক্রিবাটা কমে যাচ্ছে। এধরনের পদক্ষেপ আরও আগে নিলে ভালো হতো।