কোভিড পর্বে চাকরিজীবীদের বেড়েছে মানসিক চাপ, বীমা সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এল তথ্য
ভারতের প্রতি পাঁচজন চাকরিজীবীর মধ্যে তিনজনই মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। যা দেশের মোট চাকরিজীবী নাগরিকের প্রায় ৫৯ শতাংশ। ভারতের কর্মচারীদের এই হার বিশ্ব, এমনকী এশিয়া মহাদেশের যে গড়, তার চেয়েও বেশি। সম্প্রতি এই উদ্বেগজনক সমীক্ষা রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে মার্স ইন্ডিয়া নামে দেশের একটি নামকরা বিমা সংস্থা। তারা আরও জানিয়েছে, করোনা পর্বে মানসিক চাপ বেড়েছে অনেকটাই। কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা লিঙ্কডিন একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছিল, দেশের চাকরিজীবীদের ৫৫ শতাংশই থাকছে মানসিক চাপের মধ্যে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে পেশার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন এবং মানসিক চাপ বাড়ছে প্রায় ৩৪ শতাংশ চাকরিজীবীর। কাজ করেও যথেষ্ট উপার্জন করতে পারছেন না প্রায় ৩২ শতাংশ চাকরিজীবী। পেশাগত উন্নতির ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না প্রায় ২৫ শতাংশ কর্মচারী। সব মিলিয়ে করোনাকালে আরও বেড়ে গিয়েছে কর্মচারীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ।
করোনাপর্বের শুরু থেকেই সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলি সিংহভাগ কর্মীদের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু করে। বাড়িতে বসে ল্যাপটপ, স্মার্টফোনে কাজ করতে এখন রীতিমতো অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন চাকরিজীবীরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর ধাপে ধাপে বহু অফিস-কাছারি স্বাভবিক হলেও এখনও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের একটা বড় অংশেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু আছে। তবে বাড়িতে বসে কাজ করা গেলেও কর্মচারীদের মানসিক চাপ যে আদৌ কমেনি, বরং তা কিছুটা হলেও বেড়েছে, তা এই সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্স ইন্ডিয়ার সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে, করোনাপর্বের আগে ভারতে ৫৮ শতাংশ কর্মচারী মনে করতেন যে তাঁদের মালিক বা নিয়োগকর্তা তাঁদের ভালোমন্দের খোঁজখবর রাখেন এবং সেইমতো কিছু পদক্ষেপও করেন। ২০২১ সালের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই হার কমে হয়েছে ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ নিয়োগকর্তারা মহামারীর সময় আরও উদাসীন হয়েছেন তাঁদের কর্মচারীদের ব্যাপারে। আরও জানা যাচ্ছে, দেশের ২৭ শতাংশ কর্মচারী এই মহামারীকে অনেকাংশেই বা পুরোপুরি নেতিবাচক মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বায়নের এই অর্থনীতিতে কাজের ধরন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আট ঘণ্টা কাজের নিয়ম বহু জায়গাতে উঠে গিয়েছে আগেই। যেসব জায়গায় আট ঘণ্টার নিয়ম চালু ছিল, সেসবের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেও করোনাপর্বে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু হওয়ার পর সময়ের ধরাবাঁধা নিয়ম উঠে গিয়েছে। তাছাড়া এখনকার বেশিরভাগ বেসরকারি কাজে ‘টার্গেট’ দেওয়া থাকে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যে কোনও পরিস্থিতিতেই কাজ করে যেতে হচ্ছে কর্মচারীদের। সব মিলিয়ে চাপ বেড়েছে কর্মচারী ও চাকরিজীবীদের উপর। এই প্রবল মানসিক চাপ থেকে নানা শারীরিক সমস্যার শিকারও হচ্ছেন অনেকে।