আমতলা থেকে বাখরাহাট পর্যন্ত রোপওয়ে, আকাশ পথে সংযোগ হতে চলেছে কলকাতায়
আমতলা থেকে বাখরাহাট, আকাশ পথে সংযোগ। বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে না। হেলিপ্যাড তৈরি হচ্ছে এমনটাও নয়। গুপি-বাঘার কাছ থেকে চেয়েচিন্তে ভূতের রাজার চটি জোড়া নিয়ে আসা হচ্ছে কি? এসবের কোনওটাই হচ্ছে না। যেটা হতে চলেছে, সেটি হল, একটি রোপওয়ে। যাতে সওয়ার হয়ে রাস্তার যানজটকে পাশ কাটিয়ে শূন্যের বুক চিরে পৌঁছে যাওয়া যাবে গন্তব্যে।
রোপওয়ে তৈরির পরিকল্পনা একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তাবাকারে এসেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বলা যায়, দড়ির উপর ব্যালান্স করে যান চলাচলের ভবিষ্যৎ পথে পা দিল কলকাতা। গুয়াহাটি থেকে উত্তর গুয়াহাটি পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণের জন্য রোপওয়ে রয়েছে একটি। দেশের বহু জায়গায় রোপওয়ে তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। কলকাতায় এই চলাচল চালু হলে বাস-অটোর মতো যাত্রী নিয়ে ভাড়া খাটার প্রথম আকাশ যান হিসেবে বিবেচিত হবে এটি।
আমতলা থেকে বাখরাহাট পর্যন্ত রোপওয়ে নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ওই সংস্থা। সাতগাছিয়ার বিধায়ক মোহন নস্করের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেছে তারা। দেওয়া হয়েছে একটি প্রস্তাবও। তবে এর জন্য তিনটি দপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন, জানিয়েছেন বিধায়ক। সেটা পেলে এই কাজে হাত দিতে পারবে সংস্থাটি। আগামী সপ্তাহে ওই দপ্তরগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে তারা। রোপওয়ে সংস্থার কর্তা প্রবীর ভৌমিক বলেন, আমতলা থেকে বাখরাহাট পর্যন্ত প্রায় ন’কিমি রাস্তার উপর এই রোপওয়ে বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরো রুটে মোট সাতটি স্টেশন হবে। এর জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে না। সংস্থার দাবি, তাদের প্রযুক্তিতে আঁকাবাঁকা পথেই যেতে পারবে এই কেবল কার। প্রতিটি কক্ষে আট-দশজন করে বসতে পারবেন। রোপওয়ের উপর উঠতে লিফটের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, ওই এলাকার ভোল বদলে যাবে। অনেক কর্মসংস্থানও হবে। যানজট সমস্যায় জেরবার অবস্থা নিত্যযাত্রীদের। তাছাড়া এই চলমান যানে কোনও দূষণ হয় না। সড়কপথে যান চলাচলের চাপ অনেকটাই কমবে।
তবে এই রাস্তার উপরে রোপওয়ে বসানোর অনেক বাধা-বিপত্তি আছে। বিধায়ক বলেন, এই প্রকল্পে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বেশ কয়েকটি বাস্তব সমস্যা আছে। সেটা নিয়ে ওদের কথা বলতে বলেছি। মাথার উপরে বিদ্যুতের তার, মাটির নীচে জলের পাইপ আছে। সেক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিতে তারা কাজ করবেস, সেটা নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি, পূর্ত এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি। তারা সবুজসংকেত দিলেই আমরা নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট দিয়ে দেব। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রোপওয়ে সংস্থাকে বাখরাহাট থেকে বাড়িয়ে বড় কাছারি মন্দির পর্যন্ত করার কথা বলা হবে। কলকাতার সায়েন্স সিটিতে রোপওয়ে চলাচল করে। তাছাড়া আর কোথাও এই আকাশ যান নেই শহরে। বছর ছ’য়েক আগে শিয়ালদহ থেকে বিবাদী বাগ ও হাওড়া থেকে নবান্ন পর্যন্ত রোপওয়ে তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল অন্য একটি বেসরকারি সংস্থা। তা নিয়ে কথাবার্তা এগিয়েওছিল। কিন্তু তা এখনও হয়নি। এবার যদি আমতলায় আকাশপথ তৈরি হয়, তাহলে শহরে প্রথম যাত্রীবাহী রোপওয়ে হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেবে এই কেবল কার। এই মুহূর্তে ভারতের একাধিক রাজ্যে রোপওয়ে বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গিয়েছে চিত্রকূট, হিরাকুন্দ, জম্মু, বৈষ্ণোদেবী, ত্রিকূট, নয়নাদেবী সহ ১৫টি জায়গায় তৈরি হতে পারে আকাশপথ। অনুমতি পেলে এই তালিকায় আমতলাও প্রবেশাধিকার পেতে পারে। আর তা হলে তখন বাকি কলকাতা কবিতার ওই লাইনটা একটু ঘুরিয়ে আমতলাকে হয়ত বলবে, ‘আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি, দেখা যায় তোমাদের গাড়ি…’।