উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

প্রথম দিনের প্রচারে বেরিয়ে সাড়াই পেলেন না শঙ্কর

December 31, 2021 | 2 min read

শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলার পদ ধরে রাখার লড়াই যে এবার কঠিন তা প্রচারের প্রথম দিনেই টের পেলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বুধবার রাতে বিজেপি তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। তার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে প্রচারে নেমে পড়েন শঙ্করবাবু। প্রথম দিনের প্রচারের জন্য শঙ্কর ঘোষ বেছে নিয়েছিলেন ওয়ার্ডের দেবাশিস কলোনিকে। প্রচারের শুরুতেই যে ধাক্কা খেতে হবে তা ভাবতেও পারেননি বিজেপি বিধায়ক তথা এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলার। কার্যত একাই বাড়ি বাড়ি প্রচারে যান তিনি। শঙ্কর ঘোষকে বাড়ির দুয়ারে পেয়েও বাসিন্দাদের মধ্যে সেভাবে কোনও উন্মাদনা বা মাতামাতি দেখা যায়নি। ‘আমি তোমাদেরই লোক’ প্রমাণের তাগিদে কোনও বাড়ির বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে পড়েন শঙ্করবাবু। নানা বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। কোথাও গৃহকর্ত্রীর কাছে চা খাওয়ার আব্দার করেন। সৌজন্যতার খাতিরে বাসিন্দারা তাতে সাড়া দিলেও তাঁকে ভোট দেওয়া বা এবারও তাঁকে কাউন্সিলার হিসেবে চাওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা যায়নি। উল্টে শঙ্কর ঘোষ বেরিয়ে যেতেই তাঁকে নিয়ে বিরূপ আলোচনা করতে শোনা গিয়েছে বেশিরভাগ বাসিন্দাকে। অনেকে আবার সরাসরি ক্ষোভ উগরে দেন। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য প্রতিবছর বর্ষায় এলাকা জলের তলায় চলে যাওয়া নিয়ে প্রায় সকলেই কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগে সরব হন। অনেকে আবার সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেন। 


এলাকার বাসিন্দা বীণা দাস বলেন, গত পুরভোটে সিপিএমের হয়ে জিতেছিলেন শঙ্কর ঘোষ। প্রথম প্রথম তাঁকে দেখা যেত। কিন্তু, বিজেপিতে যাওয়ার পর আমাদের এলাকায় একদিনের জন্যও শঙ্কর পা রাখেননি। ভোটের সময় সবাই ভালো ভালো কথা বলেন। কিন্তু, জেতার পর সব ভুলে যান। গত পাঁচ বছরে আমাদের এখানে তেমন কিছু কাজ হয়নি। বর্ষাকালে গোটা এলাকা জলের তলায় চলে যায়। এ সমস্যা অনেকদিনের। 

এলাকার আরএক বাসিন্দা সুশীল দাস বলেন, বর্ষাকালে পাড়ায় জল ঢুকে পড়ে। সেই দুর্ভোগের দিনে কাউন্সিলারকে পাওয়া যায় না। এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। শঙ্কর ঘোষ ব্যক্তি হিসেবে ভালো হলেও কাউন্সিলার হিসেবে আমাদের কোনও উন্নয়ন করতে পারেননি। 


এদিন ভোটের প্রচারে বিজেপি বিধায়ককে অসহায় দেখিয়েছে। কয়েক মাস আগেই বিধানসভা ভোটের প্রচারে তাঁর সঙ্গে বিজেপির নেতা-কর্মী দেখা গিয়েছিল। এদিন ছিলেন মাত্র তিনজন। ছিল না বিজেপির কোনও পতাকা কিংবা গলায় উত্তরীয়। গত পুরভোটে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিপিএমের টিকিটে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছিলেন শঙ্কর। বামফ্রন্ট পরিচালিত পুর বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ মেয়র পরিষদ সদস্যও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, এবার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং বিজেপির টিকিটে শিলিগুড়ির বিধায়কও নির্বাচিত হন। গত পুরভোটে সিপিএমের টিকিটে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মাত্র ২৬ ভোটে জিতেছিলেন শঙ্করবাবু। এবার বিধানসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে ২৫০’র কিছু ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। গত পুরভোটে জয় এবং বিধানসভা নির্বাচনে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে যে কর্মীদের বিশেষ অবদান ছিল, তাঁদের একজন ইন্দ্রজিৎ চন্দ। তিনি এবার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন। শঙ্কর ঘোষের আরএক বিশ্বস্ত সৈনিক প্রসেনজিৎ পাল কয়েক মাস আগে তৃণমূলে যোগ দেন। এই দিকগুলি যে তাঁকে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তা এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন শঙ্করবাবু। কারণ, কাউন্সিলার হিসেবে ব্যর্থতার অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও তিনি বলেন, যে দল নীতি, আদর্শ ত্যাগ করে আইএসএফের সঙ্গে জোট করে সেই দলে থাকা যায় না। তারা কখনওই মানুষের উন্নয়নের কথা ভাবে না। সেজন্যই আমি সিপিএম ছেড়েছি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#shankar ghosh, #SMC, #Siliguri municipal polls, #bjp

আরো দেখুন