ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে করোনার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ইমিউনিটি পেয়ে যাবে সেই ব্যক্তি, দাবি বিশেষজ্ঞদের
ফের প্রবল সংকটের মুখে গোটা বিশ্বকে এনে দাঁড় করিয়েছে ওমিক্রন (Omicron)। হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। বিশ্বের কয়েক লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই আক্রান্ত। ভারতেও হাজারের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই সংকটকেই ‘শাপে বর’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মত, উপসর্গ অত্যন্ত মৃদু হওয়ায় করোনার বিরুদ্ধে ওমিক্রন প্রাকৃতিক টিকার মতো কাজ করবে। মৃত্যুঘণ্টা বাজাবে কোভিড মহামারি। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের মত, কেউ ওমিক্রনের শিকার হলে করোনার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ইমিউনিটি পেয়ে যাবে। সেটাই হবে রক্ষাকবচ।
বিশ্বখ্যাত ইজরায়েলি চিকিৎসক-গবেষক আফসাইন ইমরানির পর্যবেক্ষণ, ওমিক্রন হল এমন একটি প্রাকৃতিক টিকা যা হাজার চেষ্টা করেও ওষুধ কোম্পানিগুলো বানিয়ে উঠতে পারেনি। ওমিক্রন আক্রান্তদের হাসপাতালে ভরতি হতে হচ্ছে না। অক্সিজেন লাগছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না। অর্থাৎ, যে যে কারণে করোনাকে ভয় পেতে শুরু করেছিল মানুষ, সেই ভয়াল উপসর্গগুলি কোনওটাই ওমিক্রন উপহার দিচ্ছে না। উলটে রোগের বিরুদ্ধে তৈরি করে দিচ্ছে রক্ষাকবচ, হার্ড ইমিউনিটি। মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে ভয়ংকর হয়ে ওঠা ডেল্টাকে।
মাত্র ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই গোটা বিশ্ব প্রাকৃতিক উপায়ে করোনার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ পেয়ে যাবে। সুতরাং ওমিক্রনকে অভিশাপ না ভেবে বরং প্রকৃতির আশীর্বাদ ভাবাই ভাল। আরও এক সংক্রামক বিশেষজ্ঞ, ডাঃ যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, টিকা নেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলে কিংবা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর টিকা নিলে যে বাড়তি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সুফল মেলে, তাই জোগাবে ওমিক্রন। অর্থাৎ, ওমিক্রনের দৌলতেই আমাদের করায়ত্ত হবে হাইব্রিড ইমিউনিটি। মৃত্যুর হার থেকে বেঁচে যাবেন বহু মানুষ। সুতরাং ওমিক্রন নিয়ে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে কোভিডবিধি মেনে সচেতন হওয়া অবশ্যই কাম্য।
গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রমাণিত কোভিডের সবচেয়ে ভয়ংকর ভ্যারিয়ান্ট ডেল্টার (Delta) তুলনায় ওমিক্রন প্রায় ৩ গুণ সংক্রামক। সুতরাং প্রাকৃতিক নিয়মেই ডেল্টাকে কোণঠাসা করে ফেলেছে করোনার এই নয়া অবতার। ফুরিন ক্লিভেজের দু’টি ও স্পাইক প্রোটিনের ৩২টি-সহ মোট ৫২টি জায়গায় মিউটেশন হয়েছে ওমিক্রনের। এই ভোলবদলের ফলেই ওমিক্রন আগের তুলনায় বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। কিন্তু হারিয়েছে রোগীকে কাবু করার ক্ষমতা। অর্থাৎ, আক্রান্ত হলেও ওমিক্রনের হাতযশেই রোগী গুরুতর অসুস্থ হবেন না। অর্থাৎ, ওমিক্রন নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের উদ্বিগ্ন হওয়ার পক্ষে নন চিকিৎসকদের একাংশ। বরং ওমিক্রনের এই ‘সাম্রাজ্যবাদী’ মানসিকতা গরিব-গুর্বো মানুষদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টটি অধিক সংক্রামক হওয়ায় জনগোষ্ঠীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। তবে টিকা নির্ভর সুরক্ষাকে কতটা ফাঁকি দিতে পারে সেটাই দেখার। যদিও প্রাথমিক তথ্য মোতাবেক এটি টিকার কার্যকারিতা কিছুটা হ্রাস করতে পারছে। তবে ভুললে চলবে না, অ্যান্টিবডির সুরক্ষা ছাড়াও একে প্রতিহত করতে দেহে টি-লিম্ফোসাইট মেমরি কোষ মজুত রয়েছে। তাই আমাদের এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সুখের কথা, সংক্রমণ বাড়িয়ে জনগোষ্ঠীতে প্রভাবশালী হতে গিয়ে আক্রমণের ধার ভোঁতা হবে ও ক্রমশ নির্জীব হয়ে পড়বে। ওমিক্রনের হাত ধরে অতিমারির বিদায় ঘন্টা বাজলে আশ্চর্যের কিছু নেই।