করোনার নতুন ঢেউ ৯০ শতাংশ উপসর্গহীন, ঠেকানোর দাওয়াই একটাই—সচেতনতা
করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু, যেভাবে এক শ্রেণির মানুষ কোভিডের থেকেও দ্রুতগতিতে করোনা নিয়ে চারিদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছেন, এবারের পরিস্থিতি কি অতটাই মারাত্মক? পরিসংখ্যান কিন্তু সে কথা বলছে না। রাজ্য সরকারের কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্যরাই জানাচ্ছেন, ডেল্টা প্লাস হোক বা নতুন স্ট্রেইন ওমিক্রন—যে কারণেই হঠাৎ কোভিড বাড়ুক না কেন, এখনকার কোভিড আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই উপসর্গহীন। আর মৃদু উপসর্গ থাকা রোগীর হার মেরেকেটে ৫ শতাংশ! সেই হিসেবে রাজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে চলতি ঢেউয়ে করোনার বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যেও ১ শতাংশের কম রোগীকে ভর্তি করতে হয়েছে হাসপাতালে। এখনও পর্যন্ত অক্সিজেনের চাহিদাও তেমন নেই। আর তাই রাজ্যের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, সতর্ক থাকা অবশ্যই জরুরি। তা বলে ‘প্যানিক’ করার কারণ এখনই দেখা যাচ্ছে না। একই সুরে ট্যুইট করেছেন সর্বভারতীয় আইএমএ’র সভাপতি শাহাজানান্দ প্রসাদ সিংও।
কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল ও ডাঃ সৌমিত্র ঘোষ শুক্রবার বলেন, ‘৯৫ শতাংশের বেশি মানুষের রোগ সারছে বাড়িতে বিশ্রাম নিয়েই। হাল্কা জ্বর, সামান্য সর্দি-কাশি, গা-হাত-পা ব্যথাতেই বেশিরভাগের উপসর্গ সীমাবদ্ধ। স্বাদ-গন্ধ যাচ্ছে না। ফুসফুসের সংক্রমণ হচ্ছে না বললেই চলে। সিংহভাগেরই সিটি স্ক্যান ও চেস্ট এক্স-রে’র রিপোর্ট স্বাভাবিক। তাহলে আতঙ্কিত হবেন কেন?’ একই সুর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের গলাতেও। এদিন তিনি বলেন, ‘কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও ৮৩ শতাংশই উপসর্গহীন। মাত্র ১৭ শতাংশের ছোটখাট উপসর্গ আছে। তার মধ্যেও মাত্র ৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ছে।’ দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডাঃ সুরেশ কুমারও জানিয়েছেন, ‘এখনকার করোনা আক্রান্তদের বেশিরভাগকে আইসিইউতে ভর্তি করার দরকারই পড়ছে না। স্যাচুরেশন মাপলে দেখা যাচ্ছে, অক্সিজেনের মাত্রাও স্বাভাবিক।’
দপ্তর সূত্রের খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৫১। কলকাতাতেও দৈনিক আক্রান্ত ১ হাজার ৯০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯৫৪। পজিটিভিটিও ৫.৪৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮.৪৬। ডাক্তার ও প্রথম সারির কারোনা যোদ্ধাদের অনেকে আগেরবারের মতোই আক্রান্ত হয়েছেন। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ সহ ২৫ জন শিক্ষক, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী ইতিমধ্যে সংক্রামিত। রাজ্যজুড়ে প্রায় ৫০ জন দন্ত চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। হুড়মুড় করে এই সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য অবশ্য প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখছে না সরকার। এদিন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতালে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনে তা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হতে পারে। এখনকার আক্রান্তদের কতদিন বাড়িতে থাকতে হবে, কী কী সাবধানতা নেওয়া উচিত, ওষুধপত্র কী খাবেন ইত্যাদি তথ্য জানাতে আজ, শনিবার সরকার নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করছে। তাতে ডক্সিসাইক্লিন, আইভারমেট্রিন ওষুধ বাদ যেতে পারে।
অর্থাৎ, আতঙ্ক ছড়াক, চাইছে না সরকারও। বরং জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রেখে নিয়ন্ত্রণ আনার ব্যাপারেই উদ্যোগী হয়েছে নবান্নের শীর্ষ স্তর। আর ডাক্তার-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই মুহূর্তে করোনার আচমকা বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর দাওয়াই একটাই—সচেতনতা।