কোভিড সংক্রমণ উর্দ্ধগামী, তবুও হুঁশ নেই মহানগরীর, মাস্ক ছাড়াই পথে মানুষ
দৃশ্য-১: চিড়িয়াখানার ভিতরে থিকথিক করছে ভিড়। মুখে মাস্ক কম জনেরই। দূরত্ববিধি, না বলাই ভালো। একের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে আরেকজন।
দৃশ্য-২: ভিক্টোরিয়ার অন্দরমহলে ঠাসা ভিড়। বাইরের চাতালেও বসার আর জায়গা নেই। গায়ে গা লাগিয়ে চলছে সেলফি। না, মাস্ক এখানেও অনুপস্থিত। মাস্ক পরা থাকলে ছবি উঠবে কী করে!
শুধু বেড়ানোর জায়গা নয়। রাস্তা, গণপরিবহণ, বাজার-হাট, শপিং মল সর্বত্রই কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব লোকজনের। মুখে জুড়ে মাস্ক পরে থাকতে তাদের বড় অনীহা। রবিবার ভরদুপুরে দক্ষিণ কলকাতার এক নামী শপিং মলে মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এক মহিলা। নাম সুদর্শনা ভৌমিক। পেশায় আইটি কর্মী। মাস্ক নেই কেন? প্রশ্ন করতেই তাঁর পাল্টা জবাব, এসব নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। ভ্যাকসিন তো দেওয়া আছে। তাছাড়া এই শপিং মলে তো বেশি লোক নেই। তাই সমস্যাও নেই। আর করোনা হলে, আমার হবে। আপনার কী মশাই! এরকম অনেক উদাসীন সুদর্শনা ছড়িয়ে রয়েছেন শহরজুড়ে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের শনিবারের করোনা ডেটা বলছে, বছরের প্রথম দিনেই ৪,৫১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যে। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কলকাতার। ওইদিন শহরে নতুন করে সংক্রামিত হয়েছেন ২,৩৯৮ জন। করোনা আক্রান্তের নিরিখে দ্বিতীয় উত্তর ২৪ পরগনা। ১ জানুয়ারি সেখানে সংক্রামিত হয়েছেন ৬৮৮ জন। এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফের খবর সব সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও রবিবারের অবস্থা যে কে সেই। এদিনও অসচেতনতার ‘ট্রেন্ড’ বজায় রেখেই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ঢল নামে রাস্তায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, নিউটাউনের ইকো পার্কে ১ জানুয়ারি প্রায় ৭৬ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক ছিল না। রবিবারেও সেই উদাসীন ‘অভ্যাস’-ই বজায় রাখলেন ভ্রমণপিপাসুরা।
এদিন সব পর্যটন কেন্দ্রের সামনেই বিশাল সংখ্যক পুলিস মোতায়েন করা হয়েছিল। চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ময়দান, ভিক্টোরিয়া— সর্বত্রই পুলিসের উপস্থিতি নজরে এসেছে। সেখানে উর্দিধারীরা মাইকে প্রচার করেছেন, মাস্ক পরার অনুরোধ করেছেন করজোড়ে। লালবাজার সূত্রে খবর, ১ তারিখ সন্ধ্যার পর থেকে এদিন দুপুর পর্যন্ত মাস্ক ছাড়া রাস্তায় ঘোরার অভিযোগে ৩২২ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোভিড বিধি লঙ্ঘন করার জন্য ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্তব্যরত পুলিস কর্মীদের বক্তব্য, সেই ২০২০ সাল থেকে মানুষকে মাস্ক পরা নিয়ে সচেতন করার কাজ চলছে। প্রশাসনের তরফে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে প্রায় দু’বছর ধরে। তবে তার প্রতিফলন মানুষের সচেতনতায় দেখা যাচ্ছে না। যা দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছেন ‘ক্লান্ত’ উর্দিধারীরা।