নৌকার আদলে বাড়ি গড়ে নজির শান্তিনিকেতনে
নৌকা না কি আস্ত একটা বাড়ি, দূর থেকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। এ ধাঁধার উত্তর মিলবে একমাত্র কাছে গেলেই। ধূ-ধূ মাঠের প্রান্তরে সেই নৌকা আদতে আস্ত একটা বাড়ি। বাসের আকৃতির বাড়ি বানানোর পর এবার নৌকার আদলে বাড়ি বানিয়ে তাক লাগালেন বীরভূমের পাড়ুইয়ের শিল্পী উদয় দাস। তাঁর নবসৃষ্টি ‘নৌকাবাড়ি’ দেখতে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গল লাগোয়া সরকারডাঙায় ইতিমধ্যেই ভিড় জমাচ্ছেন উৎসাহী মানুষজন।
পাড়ুইয়ের ধানাই গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা পেশায় মৃৎশিল্পী উদয় দাস মাটি, সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্থাপত্য ও মূর্তি নির্মাণ করছেন। অভাব-অনটনের মাঝেই গত বছরের আত্মশাসন পর্বে জুলাই মাসে নিজের বাড়ি বানিয়েছিলেন বাসের আদলে। সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই নানা প্রান্তের মানুষ সেটি দেখতে ভিড় জমান ধানাই গ্রামের দাসপাড়ায় শিল্পীর বাড়িতে। ইতিমধ্যে সর্বত্রই প্রশংসিত হয়েছে তাঁর সেই শিল্পকর্ম। সংবাদ মাধ্যমে সেকথা জানতে পারেন পেশায় চিকিৎসক আশিসরঞ্জন গুহ রায় ও তাঁর স্ত্রী বিশ্বভারতীতে অধ্যাপিকা সুস্মিতা গুহ রায়। কর্মসূত্রে সুস্মিতাদেবী দীর্ঘদিন ধরে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির বাসিন্দা। কিন্তু সেই বাড়ি স্বল্প পরিসর হওয়ায় বরাবরই একটি সৌখিন বাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই স্বপ্নপূরণে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গল লাগোয়া সরকারডাঙায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি বাড়ি তৈরি করতে উদ্যোগী হন। এই ভাবনা নিয়েই ওই দম্পতি যোগাযোগ করেন পাঁড়ুইয়ের মৃৎশিল্পী উদয় দাসের সঙ্গে। শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ইচ্ছার কথা জানান ওই দম্পতি। এরপরই উদয়বাবুর নেতৃত্বে কম-বেশি দশজন শিল্পী আশিসবাবুর সোনাঝুরি জঙ্গল ঘেরা সরকারডাঙার জমিতে নৌকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। তিন মাস ধরে চলে নির্মাণ পর্ব। বাড়িটি তৈরিতে প্রায় ১১লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে উদয়বাবু জানান। তিনি বলেন, বাড়িটি বাসযোগ্য করার পরই প্রচুর মানুষ রোজই এটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। নিজের সেরাটা দিয়ে নৌকাবাড়ি নির্মাণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাড়িতে ঢুকলে সত্যিই বোঝার উপায় নেই এটা নৌকা না বাড়ি। কারণ, একটি নৌকা বাইরে থেকে ঠিক যেমনটি দেখতে হয় সেভাবেই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর এমন অভিনব বাড়ি দেখে খুশি সস্ত্রীক গৃহকর্তা।
ওই দম্পতি বলেন, সংবাদ মাধ্যমে শিল্পী উদয় দাসের অভিনব কাজের কথা জানতে পারি। এরপর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে নৌকার আদলে বাড়ি তৈরি করায় জন্য বরাত দেওয়া হয়। একজন মফস্বলের শিল্পী হয়ে যেভাবে নিপুণ হাতে উদয়বাবু বাড়িটি তৈরি করেছেন, তা এক কথায় অনবদ্য! আমরা ওর কাজে খুবই খুশি।