কংগ্রেসে ফিরছেন মৌসম? ডালুর দাবি খারিজ সাংসদের
গুঞ্জন শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগেই। শনিবার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) ইঙ্গিতবাহী মন্তব্যের পর দৃঢ় হয় জল্পনার ভিত্তি। কিন্তু রবিবার রাজ্যসভার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মৌসম নুর নিজেই সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন। মৌসম সাফ জানালেন, তাঁর কংগ্রেসে ফেরার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তিনি তৃণমূলে রয়েছেন এবং তৃণমূলেই থাকবেন। কংগ্রেসে ফেরার বিষয়ে তাঁর মামা ডালুবাবুর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি বলেও এদিন জানিয়ে দেন মৌসম।
উল্লেখ্য, সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জালালপুরে শনিবার একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়ে ডালুবাবু বলেন, মালদহের কোতোয়ালি মানে সবাই কংগ্রেসকেই বোঝেন। এই কোতোয়ালি পরিবারের কয়েকজন সদস্য তৃণমূলে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) এবং মৌসম নুর রয়েছেন। তবে আমাদের কোতোয়ালি ভবনের সদস্যের মধ্যে কোনও তিক্ততা নেই। তবু আমরা চাই, কোতোয়ালি বাড়ি রাজনৈতিকভাবেও একই থাক। আমরা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাঁরা কংগ্রেসে ফিরে এলে হাতশিবির আবার শক্তিশালী হয়ে রাজনৈতিক লড়াই করবে।
ডালুবাবু বলেন, একথা ঠিকই, গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল মালদহেও খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু তার আগে ফল খুব ভালোও হয়েছে। একটি নির্বাচন কখনও শেষ কথা বলে না। মালদহে অনেক কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক এখনও রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মানুষের কাছে যাবেন। বিভিন্ন ব্লকে ক্যালেন্ডার প্রকাশ এই জনসংযোগ কর্মসূচিরই অঙ্গ।
ডালুবাবুর মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়। তবে কি ফের কংগ্রেসেই ফিরতে চলেছেন মৌসম! যদিও জল্পনার অবসান ঘটে মৌসম নুরের মন্তব্যে। এদিন তিনি স্পষ্ট বলেন, কংগ্রেসে ফিরছি না। এ ধরনের কোনও আলোচনাও হয়নি। কোনও প্রস্তাবও নেই। ডালুবাবুর সঙ্গে সংসদের অধিবেশন চলাকালীন শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল। খুব অল্প সময়ের জন্য তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু সেসব পারিবারিক কথাবার্তা। রাজনৈতিক বিষয়ে কোনও কথাই হয়নি।
উল্লেখ্য, প্রবাদপ্রতিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বরকত গনিখান চৌধুরীর আমল থেকেই কোতোয়ালি ভবন ধীরে ধীরে কংগ্রেস রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে। গনিখানের মৃত্যুর পরও এই বাড়ি থেকে কংগ্রেসের দু’জন সাংসদ ও দু’জন বিধায়ক ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল রাজ্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয় কোতোয়ালি ভবনে। প্রথমে শাহনাজ কাদরি যোগ দেন তৃণমূলে। পরে যোগ দেন আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)। তিনি দীর্ঘদিন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাঙন ধরে দু’বারের সাংসদ তথা প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নুর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর। লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে হেরে যাওয়ার পর তাঁকে দলের জেলা সভানেত্রী করার পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি জেলা তৃণমূল সভানেত্রীর পদ থেকে সরানো হয় মৌসমকে। জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী পদ হারানোর পরে শাসকদলের বর্তমান জেলা কোর কমিটির সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব তৈরি হয় বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা নেতৃত্বের বিজয়া সম্মিলনীর আগেই তিনি পৃথকভাবে একই অনুষ্ঠান করেন তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রীকে নিয়ে।
সম্প্রতি মালদহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভাতেও হাজির থাকলেও কার্যত মৌন ছিলেন মৌসম। এরপর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। ডালুবাবুর মন্তব্যের পর জোরালো হয় সেই গুঞ্জন। তবে মৌসম নিজেই জল ঢেলে দিয়েছেন তাঁর তৃণমূল ত্যাগের সম্ভাবনায়।