মোদী জমানায় গত পাঁচ বছরে ৫ লক্ষ কোটির ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে, বলছে আরবিআই
দেশের চৌকিদার নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গত পাঁচ অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে। আর শুধুমাত্র চলতি অর্থবর্ষের হিসেব বলছে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার অঙ্ক ৩৬ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই তথ্য দিচ্ছে। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে আরবিআই। চলতি অর্থবর্ষের সঙ্গে গত পাঁচ অর্থ বছরের হিসেব যোগ করলে টাকার মোট অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াচ্ছে পাঁচ লক্ষ কোটি। ব্যাঙ্কের কর্মী-কর্তারা বলছেন, এ তো সবে শেষের শুরু। যেভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে কেন্দ্র, তাতে এই জালিয়াতির অঙ্ক কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তার কোন ঠিকঠিকানা নেই। শেষ পর্যন্ত তার দায় নিতে হবে দেশের মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষকেই। আর বিজেপি বিরোধীরা বলছে, চৌকিদারের কড়া পাহারায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ব্যবসা বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছে। নিশ্চিন্তে করেকম্মে খাচ্ছে জালিয়াতরা।
ইন্ডিয়াকে দ্রুত ডিজিট্যাল করার লক্ষ্যে চেষ্টার কোনও কসুর নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে নানা অফারের ছড়াছড়ি। বাস্তবে সেই ডিজিট্যাল লেনদেনের ছবিটা কীরকম? আরবিআই বলছে, পাঁচ বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে। এটিএম বা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিয়ের সুযোগ নিয়ে এই প্রতারণা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটির দাবি, জালিয়াতি রুখতে একাধিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই ব্যবস্থা খুব একটা কাজে যে আসেনি প্রতারণার অঙ্কই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে, অভিযোগ বিরোধীদের। তাদের বক্তব্য, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের রক্ত জল করে জমানো ন’হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আরবিআইয়ের তথ্য বলছে, গত পাঁচ অর্থ বছরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ৩৩ হাজার ৮৫১টি। এর মধ্যে গত আর্থিক বছরেই মোট প্রতারণা হয়েছিল ৭ হাজার ৩৬৩টি। তার আগের অর্থবর্ষে জালিয়াতির সংখ্যা ছিল আরও অনেকটা বেশি। সেবার ৮ হাজার ৭০৩ জন ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধুমাত্র গত অর্থবছরেই মোট ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪২২ কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে এদেশের ব্যাঙ্ক শাখাগুলিতে।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সিংহভাগ অর্থই ঋণ খেলাপির। ধার নিয়ে তা আর শোধ না করা। আরবিআইয়ের হিসেব বলছে, গত অর্থবর্ষে যে টাকার জালিয়াতি হয়েছিল, তারমধ্যে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি অঙ্ক ছিল ধার নিয়ে তা পরিশোধ না করা। এটা শুধু গত বছরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা এমনটা নয়। বছরের পর বছর ধরেই এই সংস্কৃতি চলছে। সিংহভাগ খেলাপি ঋণই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া, বলছেন কর্তারা।
ব্যাঙ্ক কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, গত ১৩ বছরের যে হিসেব সামনে এসেছে, তাতে প্রায় ২৪ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ আদায় করতে পারেনি ব্যাঙ্কগুলি। তার দায় নিতে হয়েছে সেই ব্যাঙ্কগুলিকেই। অর্থাৎ দেশের সম্পত্তি লুট হচ্ছে রমরমিয়ে। এই ১৩ বছরে ১৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার কার্যকরী মুনাফা করেছিল ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু টাকা ধার দিলে তা আর শোধ করবে না ঋণগ্রহীতারা, এটা ধরে নিয়ে ব্যাঙ্কের লভ্যাংশ থেকে মোট ১৪ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে রাখতে হয়েছে। অর্থাৎ মুনাফার প্রায় পুরোটাই খেয়ে নিয়েছে অসৎ ঋণ খেলাপিরা। এই টাকার সিংহভাগ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জমানো টাকা। রাজেনবাবু বলেন, আমাদের ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অন্যতম কারণ এই প্রতারণা। কর্পোরেট সংস্থার হাতে ব্যাঙ্কের মালিকানা গেলে ঋণের নামে আরও নয়-ছয় হবে টাকার। আর তার দাম চোকাতে হবে সাধারণ মানুষকে।