আগরতলায় মোদীর সভায় শিকেয় কোভিড বিধি, ভিড় মাস্কহীন জনতার
আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই আগে থেকেই সাজ সাজ রব ছিল ত্রিপুরায়। মাঠ ভরাতে সরকারি ক্ষমতার অপব্যহার করার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিল বিপ্লব দেব সরকার। সরকারি অফিসের কাজকর্ম লাটে উঠিয়ে দুপুর ১২ টার মধ্যে কর্মচারীদের স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘টিআইটি’ তেও একই নির্দেশ জারি করা হয়। বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অন্যান্য কর্মীদের অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। সমস্ত ক্লাস সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। সরকারি ফতোয়ায় মোদীর সভায় ভিড় হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেই ভিড়ই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কোভিড মোকাবিলায় বিজেপি সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে। সরকারি নির্দেশ মেনে বেশিরভাগ হাজির হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু মানেননি কোনও সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশের মুখেই ছিল না মাস্ক। কোভিডের এমন ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফের সময় এমন সভার আয়োজনে তাই বিজেপিকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীর ঝা-চকচকে এই সভায় বিক্ষুব্ধ বিধায়ক হিসেবেই পরিচিত সুদীপ রায় বর্মন, আশিস সাহা সহ আরও অনেকেই গরহাজির ছিলেন। যা নিয়ে দেখা দিয়েছে গুঞ্জন।
স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে মোদী আসার আগেই ভিড় উপচে পড়েছিল। সেই ছবি টুইটারে পোস্ট করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। গদগদ ভঙ্গিতে লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে জনগণের উৎসাহ, ভরসা ও আনন্দ ঝরে পড়ছে। খুব শীঘ্রই নরেন্দ্র মোদীজি এখানে পৌঁছবেন এবং বক্তব্য রাখবেন। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর এই টুইটের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের পুর ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কোভিড বিধি না মানা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর পাল্টা টুইট, বাড়তে থাকা কোভিড সংক্রমণের কী হবে? রাজ্যবাসীর জীবন ও অধিকারের কথা কে ভাবে? বিজেপি শুধুমাত্র মোদীকেই তুষ্ট করতে ব্যস্ত। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা অত্যন্ত হতাশাজনক।
মঙ্গলবার ত্রিপুরার এমবিবি বিমানবন্দরের নয়া টার্মিনাল এবং দুটি সরকারি প্রকল্পের উদঘাটন করতে রাজ্যে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে এমবিবি বিমানবন্দরের নয়া টার্মিনাল ঘুরে দেখেন তিনি। তারপর রাজধানীর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে জনসভায় যোগ দেন। সেখান থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিমানবন্দরের নয়া টার্মিনালের উদঘাটন করেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর ‘মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়’ এবং মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মূলত ইউপিএ সরকারের আমলেই শুরু হয়েছিল এই নয়া টার্মিনাল তৈরির কাজ। যদিও উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি ডবল ইঞ্জিনের ফল, মোদী সরকারের উপহার! আগে যে সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল তাদের না ছিল কোনও লক্ষ্য, না ছিল কোনও নীতি। এই পরিস্থিতিকে বদলাতেই ত্রিপুরার মানুষকে ‘হীরা’ অর্থাৎ হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়ের আশ্বাস দিয়েছিলাম, আজ এই ‘হীরা’ মডেলে ত্রিপুরা তার কানেক্টিভিটির পরিবর্তন আনছে, কানেক্টিভিটি বাড়াছে।’ তিনি বলেন, একসময় যে রাজ্য দুর্নীতির আখড়া ছিল, আজ তা বাণিজ্য করিডরে পরিণত হয়েছে। উত্তর-পূর্বের একসময়ের পিছিয়ে পরা রাজ্যে আজ বিজেপির শাসনে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে।
ত্রিপুরার আগে মণিপুরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও মণিপুর ও উত্তর-পূর্বকে অবেহলার জন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলিকে দায়ী করেন তিনি। এদিন মোদী ভোটমুখী মণিপুরে ৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মণিপুরের মইরাঙে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পতাকা উত্তোলনের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।