চাষিদের থেকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ধান কেনার গন্ডি পার করল রাজ্য সরকার
প্রথম দিকে কিছুটা ধীর গতিতে চললেও, সরকারি উদ্যোগে চাষিদের কাছ থেকে এখন লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি পরিমাণ ধান কেনা হয়েছে। নতুন খরিফ মরশুমে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মিলিয়ে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম ধান কেনা চলছিল। কিন্তু সেই ঘাটতি পূরণ করে ফেলেছে সরকার। মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে ১০ লক্ষ ৮৩ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যে গতিতে ধান কেনা হচ্ছে তাতে শুধু জানুয়ারি মাসে যে ১২ লক্ষ ২৫ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ করার ব্যাপারে আশাবাদী খাদ্যদপ্তর।
নতুন খরিফ মরশুম সরকারিভাবে শুরু হয় অক্টোবর থেকে। নভেম্বর থেকে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ধান কেনা সাধারণত কিছুটা কম হয় রাজ্যে। কারণ ওই সময় নতুন ধান কম পরিমাণে ওঠে। ডিসেম্বর মাসে নতুন ধান ওঠার পরিমাণ গতি পায়। সরকারি ধান কেনাও বাড়ে ওই সময় থাকে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বেশি পরিমাণে ধান কেনা হয়।
এবার অবশ্য প্রথম দিকে অন্য বছরগুলির তুলনায় বেশ কিছুটা কম ধান কেনা হয়েছিল। খাদ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফড়েদের ধান কেনা আটকানোর ব্যাপারে যে আরও সফলতা মিলেছে এর মাধ্যমে এটা প্রমাণ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ফড়ে নয়, প্রকৃত চাষিরা যাতে সরকারি নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেন তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খাদ্যদপ্তর, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম সহ অন্যান্য সরকারি এজেন্সিগুলি ফড়েদের আটকাতে এবার আরও বেশ কিছু নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে মরশুমের শুরুতেই ফড়েরা চাষির নামে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগের মতো সুবিধা করে উঠতে পারেনি বলে সরকারি আধিকারিকরা মনে করছেন। নতুন ধান ওঠার পর এবার প্রকৃত চাষিরা এসে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করা শুরু করেছেন। চলতি খরিফ মরশুমে ২৪ লক্ষ ৩৭ হাজার চাষি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার জন্য নথিভুক্ত আছেন। এর মধ্যে এবারে প্রথম নাম নথিভুক্ত করেছেন প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার চাষি।
রাজ্যে খরিফ ও বোরো মরশুম মিলিয়ে ধান উৎপাদন হয় প্রায় আড়াই কোটি টন। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে গত মরশুমে কেনা হয়েছে ৪৬ লক্ষ টন। এবার রাজ্য সরকার ৪৯ লক্ষ টন কিনবে বলে টার্গেট নিয়েছে। এফসিআই-কে এবারও ৬ লক্ষ টন ধান রাজ্য থেকে কিনতে বলা হয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যে উৎপাদিত ধানের একটা বড় অংশ খোলাবাজারে বিক্রি হয়। খোলাবাজারে সাধারণ ধানের দাম সাধারণত সরকারি নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় অনেকটা কম থাকে। ফড়েরা তাই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার জন্য সক্রিয় থাকে। সাধারণ চাষির কাছ কম দামে ধান কিনে সরকারের কাছে তা বিক্রির চেষ্টা হয়। কিন্তু এতে বঞ্চিত হন গরিব প্রান্তিক ও ছোট চাষিরা। চাষির নাম করে ফড়েদের ধান বিক্রির বেশিরভাগটা হয় গ্রামের সমবায় সংস্থার মাধ্যমে কেনার ক্ষেত্রে। অভিযোগ, এক শ্রেণির রাইস মিল মালিকের সঙ্গে যোগসাজস করে বেনামে ফড়েরা ধান বিক্রি করে। সরকারি সংস্থাগুলির হয়ে অস্থায়ী শিবির খোলে সমবায় সংস্থাগুলি। এবার এই ক্ষেত্রে নজরদারি ও সমবায় সংস্থা বাছাইয়ে আরও কড়াকড়ি করেছে খাদ্যদপ্তর, অত্যবশ্যকীয় নিগম ও অন্য সরকারি সংস্থারা।