রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

গঙ্গাসাগর মেলা কমিটি থেকে বাদ রাখা হোক শুভেন্দুকে, হাইকোর্টে দাবি রাজ্যের

January 10, 2022 | 2 min read

শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তার উপর নজরদারির জন্য কমিটিও গড়েছিল আদালত। এখন সেই কমিটি নিয়েই উঠল একাধিক প্রশ্ন। ওই কমিটি কি নিরপেক্ষ, রাজনীতিমুক্ত, সেখানে কেন নেই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ? আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কমিটিতে রাখা নিয়ে আপত্তি জানাল রাজ্য। সোমবার গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে মামলায় প্রায় দেড় ঘণ্টা শুনানিতে এমনই টানাপড়েন চলল হাইকোর্টে।

কোভিড পরিবেশে গঙ্গাসাগর মেলায় নজরদারির জন্য তিন সদস্যের কমিটি গড়েছিল হাইকোর্ট। ওই কমিটিতে রাখা হয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা (বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি), রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান (বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি) ও রাজ্যের এক প্রতিনিধিকে। ওই কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গড়ার আবেদন জানিয়ে পাঁচটি মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। মামলাকারীদের বক্তব্য, পরিস্থিতি বিবেচনা করতে ওই কমিটি যথাযথ নয়। এই কমিটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি নিরপেক্ষ ভূমিকা না-ও নিতে পারেন। তা ছাড়া রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনার পদে নিয়োগ এখনও আটকে রয়েছে। ফলে এখন নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজন রয়েছে।

রাজ্যের তরফ থেকেও এ নিয়ে একটি পৃথক আবেদন করা হয়। শুভেন্দুকে ওই কমিটিতে থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে তারা সওয়াল করে। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কোনও রাজনৈতিক নেতা নিরপেক্ষ হতে পারেন না। তাই রাজনীতির ব্যক্তিকে এই ধরনের কমিটিতে না ঢোকানোই উচিত।’’ অর্থাৎ নাম না করে তিনি শুভেন্দুকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ওই কমিটিতে আপতত শুভেন্দু ছাড়া অন্য কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। আবার আইনজীবী অনিন্দ্যকুমার মিত্র চিকিৎসকদের নিয়ে নতুন কমিটি গড়ার আবেদন করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গঙ্গাসাগরের জন্য আগে থেকেই একটি কমিটি রয়েছে। এখন কোভিডের জন্য এই কমিটি গড়া হল। অথচ এখানে কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়নি।’’ অনিন্দ্যর প্রস্তাব, ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বা অভিজিৎ চৌধুরীকে নিয়ে কমিটি গড়া হোক। কোভিড নিয়ে তাঁদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এই মামলায় যুক্ত আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, শুধু চিকিৎসক নন। এই মামলায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও রাখা দরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মানস গুমটা ও সুবর্ণ গোস্বামীর নাম তিনি প্রস্তাব করেন। আবার চিকিৎসক কুণাল সরকারের নাম প্রস্তাব করেন আইনজীবী ঋজু ঘোষাল। হাইকোর্টের গঠিত কমিটির সদস্যরা কেউই কোভিড নজরদারির জন্য উপযুক্ত নন বলে মনে করেন আইনজীবী অভ্রতোষ মজুমদার। তাঁর আবেদন, নতুন মেডিক্যাল কমিটি গড়া হোক। ওই সবেরই বিরোধিতা করেন জনস্বার্থ মামলার প্রধান আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একটা স্বাধীন কমিটি। শুধু পরিস্থিতি বুঝে মেলা বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে। এখানে রাজনীতি আসছে কেন। যে সব চিকিৎসকের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরাও তো সরকারি চাকরি করছেন। ফলে তাঁদের থেকেও কি নিরপেক্ষতা আশা করা যায়।’’

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর ফোরামের আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দুটোই বলা যায়। ফলে কেউ নিরপেক্ষ নন। ওই কমিটিতে হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলকে রাখা হোক। প্রয়োজনে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করুক।’’ তবে এ সব বাদ দিয়ে তিনি পুরোপুরি মেলা বন্ধের পক্ষে আর্জি করেন। তাঁর আর্জি, সব থেকে ভাল হয় মেলা বন্ধ করলে। যে কমিটিই গড়া হোক তাদের রিপোর্ট দিতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে। তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে। পরে অবশ্য তাঁর ওই যুক্তির সঙ্গে গলা মেলান সব আইনজীবীই। সবাই মেলা বন্ধের পক্ষেই মত দেন।

নতুন কমিটি গড়া হবে কি না এখন অবধি ওই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ রায় দান স্থগিত রেখেছে। ফলে এখন নতুন কোনও কমিটি গড়া নির্দেশ দেয় কি না আদালত সেটার পাশাপাশি দেখার সেই কমিটিতে কারা থাকবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Gangasagr Mela, #suvendu adhikari, #calcutta high court

আরো দেখুন