ইঁদুরের শরীরে ঢুকেই ডেল্টা প্লাস হয়ে উঠেছে ওমিক্রন! গবেষণায় মিলল প্রমাণ
হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথা, অন্য কোনওখানে। এই মন্ত্রেই কি বিশ্ব চরাচরে টিকে আছে সার্স কোভ ২? দু’বছর হতে চলল, অতিমারীর চেহারা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নোভেল করোনা (Coronavirus)। এখনও তার লয় ক্ষয়ের কোনও লক্ষণ নেই। উলটে নব নব রূপে আবির্ভূত হচ্ছে এই আরএনএ ভাইরাস। ওমিক্রন অবতারে দুর্ধর্ষ এই অণুজীব তৃতীয় ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়েছে ভারত-সহ বিশ্বের একাধিক দেশে। কিন্তু কোন মন্ত্রে এত ঘন ঘন রূপ বদল? এত বদলের প্রয়োজনই বা হচ্ছে কেন? হাতড়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ব।
কোন পথে পরিবর্তন আসছে তা জানতে না পারলে যে পরিবর্তন (পড়ুন মিউটেশন) ঠেকানো যাবে না। এই নিয়েই গবেষণা শুরু করেছিলেন একদল বিজ্ঞানী। আর তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, মানুষের শরীর থেকে মনুষ্যেতর প্রাণীর শরীরে গিয়েই (জুনোসিস) নিজের জিনগত কাঠামো বদলে ফেলে নয়া স্ট্রেনের জন্ম দিচ্ছে করোনা। এই ধারণার জলজ্যান্ত উদাহরণ ওমিক্রন। মনুষ্য দেহ থেকে ধেড়ে ইঁদুরের শরীরে ঢুকেই ডেল্টা প্লাস হয়ে উঠেছে ওমিক্রন (Omicron)। তারপর সেই নতুন স্ট্রেন সংক্রমণ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে পুনঃপ্রবেশ করেছে মানবদেহে। এই তথ্য প্রকাশ্যে এনে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, এই রিভার্স জুনোসিস না ঠেকাতে পারলে অতিমারীর বিনাশ ঘটানো যাবে না। এই নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের দলে রয়েছেন বহু তারকা অধ্যাপক। আমেরিকার ইমিউনোলজিস্ট ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন, সুইজারল্যান্ডের মলিকিউলার এপিডেমোলজিস্ট এমা হডক্রাফট, ব্রিটেনের অ্যান্ড্রু রামবট, রবার্ট গ্যারি প্রমুখ।
সম্প্রতি বিশ্ববন্দিত নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি পেপারেও এই রিভার্স জুনোসিসের অবতারণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, একটা বিষয় পরিষ্কার, করোনা মানুষের মধ্যে থেকে বিদায় নিক বা না নিক, মনুষ্যেতর প্রাণীদের মধ্যে থেকে যাবে। এবং তা সময় সুযোগ মতো ‘স্পিল ওভার’ করে মানুষের শরীরে চলে আসবে। যেমন বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি ছিল চিনের ইউহানে নোভেল করোনা এসেছে বাদুর থেকে মানব দেহে। অর্থাৎ এই যাওয়া আসা চলতেই থাকবে।
অতিমারীর মাঝামাঝি সময়ে জানা গিয়েছিল মানুষ ছাড়াও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে ওস্তাদ করোনা ভাইরাস। কুকুর, বিড়াল, বাঘ, সিংহ ছাড়াও ল্যাবরেটরি-প্রাণী ফেরেট, ইঁদুর গোত্রের প্রাণী মিঙ্ককে আক্রমণ করছিল করোনা। তাতেও সাধ মিটল না তার। ভোল পালটে এখন তার শিকার ওয়াইট টেল ডিয়ারের মতো বন্যপ্রাণী ও ইঁদুর। অর্থাৎ ক্রমশ তার সাম্রাজ্য বাড়াচ্ছে এই ভাইরাস। এর সঙ্গে তার প্রথম ধারক বাদুর তো রয়েছেই। এমনটাই জানিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। এ সমস্ত দেখে বিজ্ঞানীরা রীতিমত তাজ্জব বনে যাচ্ছেন। করোনার এই মূর্তি তাদের ভাবাচ্ছে এই কথাই, এই পৃথিবীটাতে বেঁচেবর্তে থাকতে এসেছে করোনা। তার সঙ্গে আমাদের হয়তো এখন বোঝাপড়া করেই থাকতে হবে।