ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব বাংলায়
একদিকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, অন্যদিকে কর্মসংস্থান। দু’দিকেই জোর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আয়োজন করেছেন জেলা ধরে ধরে শিল্প সম্মেলন বা সিনার্জির। কোভিডের বাড়বাড়ন্তের জেরে এখনও পর্যন্ত সাতটি জেলায় তা করা সম্ভব হয়েছে। সেখানে মাত্র এক মাসেই সাফল্যের মুখ দেখা গিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বাংলায়। অঙ্কটা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত লগ্নি ছাপিয়ে গিয়েছে বিগত সম্মেলনকে। প্রস্তাবগুলির বাস্তবায়ন হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে রাজ্যে।
চার বছর আগে চার-পাঁচটি জেলাকে নিয়ে একসঙ্গে সিনার্জির আয়োজন করেছিল নবান্ন। তাতে অভাবনীয় সাড়া মেলে। সেকথা মাথায় রেখে বাংলায় তৃতীয়বার সরকার গঠন করেই শিল্পায়নে বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুদ্র-কুটির হোক কিংবা ভারী শিল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে তাঁর প্রশাসন। এবার জেলা ধরে ধরে সিনার্জি আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গোটা বিষয়টির তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরকে। সেইমতো গত বছর ১১ ডিসেম্বর থেকে জেলায় জেলায় শুরু হয় ওই সম্মেলন। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সূচি মেনে সাতটি জেলায় তা হয়েছে। তারপর করোনা পরিস্থিতির জেরে একটি সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই সাত জেলার সিনার্জিতে কয়েক হাজার শিল্পোদ্যোগী, বণিকসভা, শিল্প সংস্থার আধিকারিকরা উপস্থিত হয়েছিলেন। বিনিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা কত দ্রুত মেটানো যাবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়। তারপরই ‘ভাঙা’ সম্মেলনে রাজ্যের ঝুলিতে আসে বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাব।
গত ১১ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সিনার্জি। ওই জেলার জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকা। তাতে তৈরি হবে প্রায় ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ। মূলত টেক্সটাইল, ফুড প্রসেসিং এবং বস্ত্রশিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখা গিয়েছে এই জেলায়। তিনদিন পর হাওড়া জেলায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সিনার্জিতে আসে ১২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব। অন্তত ৫২ হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টে। এই জেলায় স্টিল ফ্যাব্রিকেশনে বিনিয়োগের ঝোঁক বেশি। ২২ ডিসেম্বর পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা সিনার্জি অনুষ্ঠিত হয় একত্রে। সেখানে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। তা বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১১ হাজার। ২৮ ডিসেম্বর নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানের সিনার্জিতে মোট ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। মোট ৪৮ হাজার কর্মসংস্থান হতে চলেছে দুই জেলায়।
গত ৭ জানুয়ারি হুগলিতে সিনার্জি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আপাতত সেটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে এবং ২৮ জানুয়ারি কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্মেলন হবে।