উত্তরপ্রদেশে আবারও ভাঙনের মুখে বিজেপি, দল ছাড়লেন মন্ত্রী সহ ৫ বিধায়ক
একের পর এক রাজ্যে পদ্মের নৌকা কি ডুবতে চলেছে? আগাম সেই আভাস পেয়েই কি ডুবন্ত নৌকা ছেড়ে পালাচ্ছেন অভিজ্ঞ নেতারা? গোয়ার পর এবার উত্তরপ্রদেশ। ভোট যত এগিয়ে আসছে, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপিতে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। এ পর্যন্ত চারজন বিধায়ক গোয়ায় গেরুয়া শিবির থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আবার রাজ্যের মন্ত্রী। এবার সেই একই প্রবণতা শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। যোগী আদিত্যনাথ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত মুখ শ্রমমন্ত্রী স্বামীপ্রসাদ মৌর্য মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন। তিনি সমাজবাদী পার্টিতে (সপা) যোগ দিচ্ছেন। ইস্তফাপত্রে বিজেপিকে দলিত ও অনগ্রসর বিরোধী একটি উচ্চবর্ণের আধিপত্যকামী দলের তকমাও দিয়েছেন স্বামীপ্রসাদ। সঙ্গে করেছেন বিস্ময়কর একটি মন্তব্য—‘আমি সর্বদাই জয়ী দলের সঙ্গে থাকি। এবার অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির জয় অবশ্যম্ভাবী।’ তিনি অবশ্য একা নন। স্বামীপ্রসাদের ইস্তফা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আরও চার বিজেপি বিধায়ক জানিয়ে দেন, তাঁরাও বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করছেন। যোগ দিচ্ছেন সমাজবাদী পার্টিতে।
রোশনলাল শর্মা, ব্রজেশ প্রজাপতি, ভগবতী সাগর এবং বিনয় শাক্য—চার বিধায়কই ইস্তফা ঘোষণার পর জানান, ‘এটা সবেমাত্র শুরু। আরও অনেকে বিজেপি বিধায়কই এবার দল ছাড়তে চলেছেন। বিজেপি বহু স্থানে প্রার্থী পাবে না। কারণ, এবার কোন কোন আসনে বিজেপি বিপুলভাবে হারছে তা স্পষ্ট। সেই আসনগুলিতে কেউ প্রার্থী হতে চাইছে না।’ একই ইঙ্গিত দিয়েছেন এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারও। এদিন এক সাংবাদিককে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৩ জন বিধায়ক সপায় যোগ দেবেন। উত্তরপ্রদেশের মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। অন্যদিকে, টুইটারে স্বামীপ্রসাদের সঙ্গে ছবি দিয়ে তাঁকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব স্বয়ং। সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামাজিক ন্যায়ের বিপ্লব (ইনকিলাব) আসবে। বাইশে (২০২২) বদল আসবে।’ সপা মুখপাত্র আই পি সিং আরও একধাপ এগিয়ে লখনউতে বিজেপির রাজ্য দপ্তরের ঠিকানায় উপহার হিসেবে একটি তালা পাঠিয়েছেন। টুইটারে সেই অর্ডারের ছবি দিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ১০ মার্চের পরে এটি দপ্তরে লাগিয়ে বাড়ি চলে যাবেন।
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা নিয়ে মঙ্গলবারই দিল্লিতে সদর দপ্তরে বিজেপি কোর গ্রুপের বৈঠক ছিল। বৈঠকে যোগ দিতে রাজধানীতে এসেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। সেখানেই লখনউতে ‘ভূমিকম্প’ আসার কথা তিনি জানতে পারেন। আপাতত লখনউতে সবথেকে বড় চর্চা—আরও কে কে আছেন তালিকায়? রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে বিধায়ক ও মন্ত্রীদের উপর নজরদারি শুরু করেছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ আবার সরকার গঠন করতে চলেছেন বলে প্রচার করছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির নৌকা ছাড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে নেতাদের মধ্যে। কয়েকদিন ধরেই এই প্রবণতা প্রথম শুরু হয়েছে গোয়ায়। সেখানে আরও তিনজন বিজেপি বিধায়ক কংগ্রেস ও স্থানীয় আঞ্চলিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। উত্তরপ্রদেশে স্বামীপ্রসাদ মৌর্যের পদত্যাগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এবারের ভোটে সব পক্ষের চোখ দলিত ভোটের দিকে। মায়াবতী কোনও এক রহস্যময় কারণে নিজেকে ভোটযুদ্ধ থেকে আড়ালে রেখেছেন। তাঁর ভোটব্যাঙ্কও আর অটুট নেই। অতএব সেই দলিত ভোট কোনদিকে যাবে? ঠিক এই প্রেক্ষিতে স্বামীপ্রসাদ বিজেপিকে দলিত বিরোধী আখ্যা দিয়ে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেওয়ায় প্রচারের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেলেন যোগী।