টিকা নিতে অনীহা, শিক্ষককে নিজের বাড়িতে তালাবন্দী করল প্রতিবেশীরা
টিকা না নিলে বেরতে দেওয়া হবে না বাড়ি থেকে। এমনই দাবি তুলে এক প্রাথমিক শিক্ষকের বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে দিলেন এলাকার বাসিন্দা মহিলারা। সোমবার সকালে কোচবিহার জেলার বক্সিরহাট এলাকার ঘটনা। ক্রমশ বাড়ছে সংক্রমণ। তারই মধ্যে স্কুল স্থানীয় বাঁশরাজা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক নারাজ কোভিড টিকা নিতে। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে বিফল এলাকার বাসিন্দারা শিক্ষকের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের বক্সিরহাটের মহিষকুচি গ্রামের বাসিন্দা ওই স্কুল শিক্ষক সুবোধ ধরকে বার বার কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিতে চাননি। তাই সোমবার সকালে শিক্ষকের বাড়ির দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন গ্রামের মহিলারা৷ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেকে করোনা টিকা করণের কথা বলা হয়েছে বার বার। এমনকী স্থানীয় আশাকর্মীরাও ওই শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে টিকা নিতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এবং তাঁর স্ত্রী এখনও পর্যন্ত টিকা নেননি। মহিষকুচির স্বাস্থ্য আধিকারিক নীলিমা সরকার জানান, অন্তত ১২ বার ওই শিক্ষকের বাড়ি গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু টিকা নিতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে কোভিড অতিমারীর তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজ্যে। এর প্রকোপে সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে কোচবিহার জেলাতেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকা ছেয়ে গিয়েছে সংক্রমণে। কিন্তু সরকারি কর্মী প্রাথমিক শিক্ষক করোনার টিকা নিতে নারাজ।
এরই প্রতিবাদে এ দিন গ্রামের মহিলারা দল বেঁধে ওই শিক্ষকের বাড়ি যান। মহিলাদের দাবি, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ওই শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, টিকা নেওয়া কতটা জরুরি। কিন্তু লাভ হয়নি। গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায় ওই শিক্ষক পরিবারের। তার পরেই মহিলারা ওই শিক্ষকের বাড়ির দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। এমনকী ওই শিক্ষক টিকা নিতে রাজি না হলে দরজার তালা খোলা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন মহিলারা।
এদিনের ঘটনার পরও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় সুবোধ ধর। তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশিকায় কোথাও টিকাকরণ বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা নেই। বরং কোভিড টিকা নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্বাধীন ভাবে যে কোনও নাগরিকের। আমি টিকা নেব না। এটা কোনও ভাবেই আইনের চোখে অপরাধ নয়।‘ যদিও এই যুক্তি মানতে রাজি নন স্বাস্থ্যকর্মীরা। রাজি নন এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের দাবি শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী যদি অবিলম্বে টিকা না নেন, তবে তাঁদের এলাকায় বেরতে দেওয়া হবে না৷
বিক্ষোভকারী স্থানীয় বাসিন্দা ললিতা সরকার বলেন, ‘আমাদের একটা নিরাপত্তা প্রয়োজন। পাড়ার মধ্যে একজন এ ভাবে থাকতে পারেন না। চারদিকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। উনি তো শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না। আমরাও বিপদে পড়ব।‘