উন্নয়নের নামে ঘুরপথে দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রেলমন্ত্রকের
উন্নয়নের দোহাই দিয়ে ঘুরপথে দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক। স্টেশন ডেভেলপমেন্ট ফি’র নামে যাত্রীদের টিকিটে শর্তসাপেক্ষে অতিরিক্ত লেভি কার্যকর করার কথা জানিয়ে দিয়েছে রেল বোর্ড। এরপর এবার কি বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেনের প্যাকেজ খরচও বৃদ্ধির পথে হাঁটছে রেল?
মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, এমনই সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। আইআরসিটিসিকে (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন) পাঠানো রেল বোর্ডের একাধিক চিঠিতে জানা যাচ্ছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশের সমস্ত ট্যুরিস্ট স্পেশালকে ‘ভারত গৌরব’ ট্রেন হিসেবে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভারত গৌরব ট্রেনের ক্ষেত্রে প্যাকেজের খরচ চূড়ান্ত করার সম্পূর্ণ এক্তিয়ার দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে। স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তুমুল জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের একটি বড় অংশ প্রশ্ন করছে, দেশ জোড়া করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের কোষাগার ভর্তি করতে কেন বারবার যাত্রীদেরই নিশানা করছে রেল?
উল্লেখ্য, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসার ও প্রচারের লক্ষ্যে থিমভিত্তিক পর্যটনকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রুটে ভারত গৌরব ট্রেন চালানোর কথা জানিয়েছে রেল। সেইসব ট্রেনের পরিচালনভার যে একপ্রকার বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার রাস্তাই খোলা রাখা হচ্ছে, সেই ইঙ্গিতও ইতিপূর্বে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। কারণ এই ট্রেন চালানোর জন্য বেসরকারি কোনও সংগঠনের মতোই আবেদন করতে হবে অনলাইনে। দিতে হবে অ-ফেরতযোগ্য এক লক্ষ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। নথিপত্র খতিয়ে দেখে আবেদন জমা পড়ার ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে জোন তা গ্রাহ্য অথবা খারিজ করবে।
কিন্তু ঘটনা হল, সারা দেশে রামায়ণ যাত্রা ট্রেন, গুরু কৃপা ট্রেনের মতো সময়ে সময়ে যে ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেনগুলি চালানো হয়, সেগুলিরও পরিচালনা ভারত গৌরব ট্রেন স্কিমে করার সিদ্ধান্ত আগে নেয়নি রেলমন্ত্রক।
আইআরসিটিসিকে পাঠানো উল্লিখিত চিঠিগুলিতে রেল বোর্ড স্পষ্ট জানিয়েছে, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেনগুলির ‘চার্জিং প্রিন্সিপাল’ এখন যা আছে, তাই থাকবে। তারপর থেকেই এই ট্রেনগুলি শুধুমাত্র ভারত গৌরব ট্রেন পরিচালনা স্কিমে চালাতে হবে। যেখানে প্যাকেজ খরচ নির্ধারণ করার পাশাপাশি সামগ্রিক বিজনেস মডেল চূড়ান্ত করার ভার দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকেই। প্রশ্ন উঠছে, উল্লিখিত স্কিমে সব ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেন চালানো হলে অন্য দর্শনার্থী স্পেশাল ট্রেনগুলির পরিচালন ভার আইআরসিটিসির হাতে নাও থাকতে পারে? ফলে সবমিলিয়ে যাত্রীদের আশঙ্কার সঙ্গত কারণ রয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সরাসরি প্যাকেজ খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা মেনে না নিলেও আইআরসিটিসি সূত্রে অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ‘ট্যারিফ’ সংক্রান্ত পরিবর্তন আগামী দিনে অবশ্যম্ভাবী।