চার পুরসভায় নির্বাচন নিয়ে আজ হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন
আগামী ২২ জানুয়ারি চার পুরসভায় নির্বাচন হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরই ছেড়ে দিল হাইকোর্ট। কোভিড পরিস্থিতি এবং সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোট করাতে চায় কি না, সে ব্যাপারে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছে আদালত। অর্থাৎ, এই আবহে ধরে নেওয়াই যায়, আগামী ২২ তারিখ পুরভোট হচ্ছে। কারণ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন বারবার জানিয়েছে, এই ভোটে তাদের কোনও আপত্তি নেই। বরং কোভিড বিধি মেনে এই নির্বাচনের বিষয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। তাদের সাফ কথা, পর্যাপ্ত ভোটকর্মী রয়েছে। নির্ধারিত দিনে চার পুরসভার নির্বাচন করতে কোনও বাধা থাকার প্রশ্নই নেই।
আগামী ২২ জানুয়ারি বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল এবং শিলিগুড়িতে পুরভোট করাতে চায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আজ, বুধবার তাদের এই বক্তব্যই হলফনামা আকারে পেশ করা হবে। ওই চার পুরসভার ভোটপর্ব নির্বিঘ্নে মেটাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, হাইকোর্টকে তাও জানানো হবে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
মঙ্গলবার হাইকোর্টে চার পুরসভার ভোট পিছনোর দাবিতে হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল। সেখানে কমিশনের উদ্দেশে একটি গুরুতর প্রশ্ন রাখে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ—করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে চার পুরসভায় প্রতিটি বুথের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ভোটকর্মী মিলবে তো? এই প্রশ্নের উত্তর তথ্য সহ হলফনামা আকারে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয় কমিশনকে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে ওই চার পুরসভায় কী হারে কোভিড সংক্রমণ হচ্ছে, কত শতাংশ নাগরিক সেখানে কোভিড আক্রান্ত, কতগুলি কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে ইত্যাদি তথ্য ও পরিসংখ্যানও হলফনামা দিয়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আগামী ১৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার মামলার পরবর্তী শুনানি।
আদালতের আগের নির্দেশ অনুযায়ী এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হলফনামা ও মামলাকারীর উত্তর বেঞ্চের কাছে জমা পড়ে। মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য দাবি করেন, ‘যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বৃহত্তর স্বার্থে ভোট পিছিয়ে দেওয়া উচিত। অন্তত চার সপ্তাহের জন্য।’ জবাবে কমিশন জানায়, ‘রাজ্য সরকার সার্বিক লকডাউন ঘোষণা করেনি। তাই ভোট পিছিয়ে দেওয়ারও কোনও কারণ নেই। বরং যে সংশোধিত গাইডলাইন ঘোষিত হয়েছে, তা অনুসরণ করলেই যথেষ্ট।’ একমাত্র কমিশনই পারে ভোট স্থগিত রাখার ঘোষণা করতে—একথা উল্লেখ করে এরপর বেঞ্চ জানতে চায়, তারা কি এককভাবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নিতান্তই অপারগ? যদিও রাজ্য এ প্রসঙ্গে সাফ জানিয়েছে, বিষয়টি কমিশনের বিচার্য।
এদিকে, সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা ভেবে এদিন আরও একটি নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনওভাবেই লাউড স্পিকার বাজানো যাবে না। রাত ন’টা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্ত করা যাবে না প্রচার। ৭২ ঘণ্টা আগেই ভোটের প্রচার পর্ব শেষ করতে হবে। কমিশনের নিয়ম তথা কোভিড বিধি ভাঙার জন্য এখনও পর্যন্ত তিন জনকে শো-কজ করা হয়েছে। ভোটপর্বের নিরাপত্তায় রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ন’হাজার সশস্ত্র পুলিসের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কলকাতার পুরভোটের বিন্যাস মেনেই আসন্ন চার পুরসভায় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, পুলিসের সংখ্যা বাড়তে পারে। আগামী শুক্রবারই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।