করোনা রোধে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, গবেষণায় নয়া দিশা এই তিন বাঙালির
কোভিড রোগীদের সারিয়ে তুলতে ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ তৈরি করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে দেশের বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতা সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ সংক্রান্ত গবেষণায় নয়া দিশা দেখালেন, রাজ্যের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান, বিজ্ঞানী সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে গবেষক নবারুণচন্দ্র দাস এবং পৃথা চক্রবর্তী তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় করোনাভাইরাসের আলফা, ডেল্টা, ডেল্টা প্লাস এবং ওমিক্রনের বিরুদ্ধে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, ওই গবেষণায় সক্রিয় অ্যান্টিবডিগুলির ভাইরাসের প্রতি আসক্তি-যুক্ত পেপটাইড শৃঙ্খল (সিডিআর)-গুলি যুক্ত করে একটি কাইমেরিক অ্যান্টিবডি (দু’টি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সংযুক্তি) প্রস্তুত করা হয়েছে। যা কোভিড-১৯ সংক্রমণের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে বলে তিন বিজ্ঞানীর দাবি। তাঁদের ওই গবেষণাপত্র ইউরোপের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ইমিউনোলজিক্যাল সোসাইটি’-র জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার্স অফ ইমিউনোলজি’-র সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানী সুপ্রভাত জানিয়েছেন, তাঁদের ওই গবেষণায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী এবং ইন্দো-ফরাসি যুগ্ম গবেষণাদলের সদস্য, পালাক্কড় আইআইটি-র অধ্যাপক জগদীশ ব্যারি একটি গুরুত্পূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই গবেষণায় ‘বায়ো ইনফরমেটিক্স’ এবং ‘কম্পিউটেশনাল বায়োলজি’-র সাহায্যে আমেরিকার ওষুধ নিয়ামক সংস্থা এফডিএ (ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনুমোদিত আট ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের মূল সংক্রামক প্রোটিনের (স্পাইক প্রোটিন) উপর ওই আট ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সক্রিয়তা পরীক্ষা করেছিলেন তাঁরা। তাতে দেখা গিয়েছেন টিকসাজেভিমাব, সিলজাভিমাব, রেজদানিভিমাব, বামলানিভিমাব এবং সত্রভিমাব মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলি করোনাভাইরাসের নয়া রূপগুলির উপরেও সক্রিয় ভাবে কার্যকর।
পরীক্ষাগারে তৈরি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সংমিশ্রণ শরীরে প্রয়োগ করে কয়েক মাস আগেই এক রোগীকে সুস্থ করে তুলেছিলেন হরিয়ানার একটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তিন গবেষকের দাবি, স্পাইক প্রোটিনের ৫০টিরও বেশি পরিবর্তিত রূপের অধিকাংশই প্রতিরোধে সক্ষম হবে ওই পাঁচটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি।
সুপ্রভাত বলেন, ‘‘সাধারণ জৈবিক নিয়মে ভাইরাস তার চরিত্র পরিবর্তন করবে। বিজ্ঞানের তত্ত্বেও সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিরন্তর গবেষণা এবং তার সফল প্রয়োগে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপ প্রতিরোধ সম্ভব। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এবং কাইমেরিক অ্যান্টিবডি অবশ্যই করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাবে। বর্তমানে অনেকগুলি ক্ষেত্রেই তা প্রমাণিত হয়েছে।’’
নবারুণ এবং পৃথা জানান, গত বছরের মার্চ মাস থেকে আসানসোলে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ‘ইন্টিগ্রেটিভ বায়োকেমিস্ট্রি এবং ইমিউনোলজি ল্যাবরেটরি’-তে এই গবেষণা শুরু করেছিলেন তাঁরা। মাস চারেকের চেষ্টায় আসে সাফল্য।