রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

করোনাকালে রোজগার তলানিতে, ঝুঁকি নিয়েও কাজ চালিয়ে যেতে চান দেহোপজীবিনীরা

January 13, 2022 | 2 min read

ছবি: সংগৃহীত

‘‘পেট চালানোই যখন দায়, তখন করোনার কথা কে আর ভাবে!’’— বৌবাজারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন বিশাখা লস্কর। পেশায় যৌনকর্মী বিশাখা এখন চাইছেন, প্রথম লকডাউনের সেই অভিশপ্ত দিনগুলি যেন আর ফিরে না আসে। সংক্রমণ সামলে সংসার চালানোর মতো রোজগারটুকু যেন তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ফের বন্ধ না হয়ে যায়— আপাতত এটুকুই চাওয়া যৌনকর্মীদের।

দু’বছর আগে, সংক্রমণের প্রথম ঢেউ ও দেশজোড়া লকডাউনের ধাক্কায় প্রায় ভেসে গিয়েছিলেন যৌনকর্মীরা। রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। ঘরভাড়া দিতে না পেরে অনেকেই সোনাগাছি ছেড়ে ফিরে গিয়েছিলেন নিজের বাড়িতে। অনেকে অন্য কোনও কাজে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, বাড়ি ফিরে অনেকে গার্হস্থ হিংসারও শিকার হচ্ছেন।

গত বছর থেকে অবশ্য সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যে কিছু দিন লকডাউন হলেও যৌনপল্লিতে তা পুরোপুরি ভাবে থাবা বসাতে পারেনি। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে গিয়েছেন মেয়েরা। পরিস্থিতি যখন আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে যেতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই ফিরেছে তৃতীয় ঢেউ। তবে এর ধাক্কায় রোজগার কমতির দিকে হলেও পুরো বন্ধ হয়নি। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’র সেক্রেটারি ও যৌনকর্মী কাজল বসুর কথায়, ‘‘রোজগার কমেছে ঠিকই, তবে সোনাগাছি চলছে এখনও।’’

কী ভাবে? কাজল জানাচ্ছেন, যৌনকর্মীদের জন্য তৈরি ঊষা মাল্টিপারপাজ় কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে যাঁরা আগে নিজেদের সঞ্চিত টাকা রাখতে পেরেছিলেন, তাঁরা দরকারে সেই টাকা তুলে সংসার চালাচ্ছেন। আর যাঁদের পক্ষে সঞ্চয় সম্ভব হয়নি, তাঁরা সংক্রমণের ভয় নিয়েই কাজ করছেন। মাস্ক পরা ও জীবাণুনাশক ব্যবহারের প্রচার করা হলেও ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা যৌনপল্লিতে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা কার্যত অসম্ভব। তাই সংক্রমণও হানা দিয়েছে। জ্বর-সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলেও ওষুধ খেয়েই সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। দুর্বারের প্রেসিডেন্ট বিশাখা বলছেন, ‘‘শুধু সোনাগাছিই নয়, কালীঘাট-খিদিরপুর-বৌবাজার সর্বত্র রোজগারের অবস্থা খারাপ। তা সত্ত্বেও সেখানে নতুন আসা মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, পরিচারিকার কাজ হারিয়ে বাধ্য হয়েই এই পেশায় ফিরেছেন তাঁরা।’’ তবে বহু মানুষ ও সংগঠন যে এই কঠিন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেটাও বড় পাওনা বলেই মনে করছেন কাজল-বিশাখারা।

ইতিমধ্যে যৌনকর্মীদের রেশন বিলির তথ্য সংক্রান্ত হলফনামা জমা না দেওয়ায় রাজ্য সরকারকে তিরস্কার করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের পরে যৌনকর্মীদের খাদ্য-সমস্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে শীর্ষ ন্যায়ালয়।

তবে স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানাচ্ছেন, গত দু’বছরের মতো এ বারেও সরকারের তরফে চাল-ডাল বিলি করা শুরু হয়েছে। সোনাগাছির প্রায় সাড়ে চার হাজার যৌনকর্মীর নামের তালিকা ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে তাঁর কাছে। মঙ্গলবার সোনাগাছিতে গিয়ে ৫০ জন মেয়ের হাতে পাঁচ কেজি চাল ও এক কেজি মুসুর ডাল তুলে দিয়েছেন তিনি। বাকি মেয়েদের কাছেও পর্যায়ক্রমে সেই শুকনো রেশন পৌঁছে দেওয়া হবে। আর রাজ্যের অন্যত্র? মন্ত্রী বলছেন, ‘‘শুধু সোনাগাছি বা কলকাতার যৌনকর্মীরাই নন। রাজ্যের প্রায় ১৭ হাজার যৌনকর্মী এবং ৫৩১৪ জন রূপান্তরকামীর কাছে শুকনো খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।’’ এর জন্য প্রায় ৬৯ লক্ষ টাকা বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকেও একহাত নিচ্ছেন যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঊর্মি বসু। তাঁর সাফ কথা, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে এত দিন তো যৌনকর্মীদের কথা এক বারও ভাবেনি কেন্দ্র! দেশে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কত, সেটাও তো জানাতে পারেনি তারা।’’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sex workers, #covid crisis, #Income, #covid 19

আরো দেখুন