উত্তরবঙ্গে চা শ্রমিক সংগঠনের বাগান ইউনিট তৈরি করতে চলেছে তৃণমূল
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ৩১ জানুয়ারির পর শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের চা শ্রমিক সংগঠনের বাগান ইউনিট তৈরি হতে চলেছে। উত্তরবঙ্গের ৩০২টি চা বাগানের প্রতিটিতে ইউনিট কমিটি গঠন হবে।
প্রতিটি বাগানে ইউনিট কমিটি গঠন হয়ে গেলেই লোকসভা ভোটে উত্তরের চা বলয়ের হারানো ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে চা বাগানে ঝাঁপাতে চলেছে জোড়াফুলের চা শ্রমিক সংগঠন। প্রসঙ্গত, চা শিল্পে তৃণমূলের একাধিক চা শ্রমিক সংগঠন ছিল। প্রায় পাঁচটি চা শ্রমিক সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল দলে। তবে পাঁচটি সংগঠন থাকলেও তার মধ্যে প্রধান দু’টি চা শ্রমিক সংগঠন ছিল বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়ন ও তরাই-ডুয়ার্স টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস ইউনিয়ন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল দলের কট্টর সমর্থক ও কর্মী হলেও একাধিক চা শ্রমিক সংগঠন থাকার কারণে চা শ্রমিকরা যেমন বিভ্রান্ত ছিল, তেমনি দলের প্রতিও ক্ষুব্ধ ছিল। দলের কোন চা শ্রমিক সংগঠনকে চাঁদা দিতে হবে তা নিয়েও শ্রমিকদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হতো। শ্রমিকদের নিয়ে দলের একাধিক শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বের মধ্যেও আকচাআকচি লেগেই থাকত।
জোড়াফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের মূল্যায়ন, দলের মধ্যে শ্রমিক সংগঠনগুলি ঐক্যবদ্ধ না থাকায় চা বলয়ের শ্রমিকদের উপর তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ ততটা জোরালো ছিল না। তাই লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে পদ্মফুলের বাক্সেই শ্রমিকদের ভোট চলে যায়। আর সেইজন্যই ডুয়ার্স তথা উত্তরের চা বলয় থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল দলকে।
এই উপলব্ধি থেকেই সম্প্রতি দলের একাধিক চা শ্রমিক সংগঠন ভেঙে দিয়ে শাসক দল তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন’ নামে দলের একটিই নতুন চা শ্রমিক সংগঠন তৈরি করে। ইতিমধ্যেই কলকাতায় নতুন চা শ্রমিক সংগঠনের ৭৬ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়ে যাওয়ায় এবার ৩১ জানুয়ারির পর উত্তরবঙ্গের প্রতিটি চা বাগানে বাগানে সংগঠনের ইউনিট কমিটি গঠন হতে চলেছে। ইউনিট কমিটিতে কারা জায়গা পেতে চলেছেন তা নিয়ে এখন থেকেই বাগানে বাগানে শাসক দলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরনো একাধিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ইউনিট কমিটিতে নতুন মুখও জায়গা পাবে কি না, তা নিয়ে প্রতি বাগানে চর্চা চলছে।
শাসক দলের নতুন চা শ্রমিক সংগঠন তৃণমূল চা বাগন শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি মান্না জৈন বলেন, আগামী ২৪ তারিখ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও কয়েকটি নাম সংযোজন হবে। তারপরেই ৩১ জানুয়ারির পর থেকে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি বাগানে বাগানে সংগঠনের নতুন ইউনিট কমিটি গঠনের কাজে ঝাঁপাচ্ছি আমরা। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল সোনার বলেন, সংগঠনের নতুন বাগান ইউনিট কমিটিতে আগের একাধিক সংগঠনের দক্ষ নেতারাও যেমন থাকবেন, তেমনি নতুন মুখকেও জায়গা করে দেওয়া হবে। ফলে সংগঠনের বাগান ইউনিট কমিটিগুলিতে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে অহেতুক জল্পনার কোনওরকম অবকাশ নেই।
নকুলবাবু আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করেই আমরা চা বাগানে ঝাঁপাচ্ছি। লক্ষ্য একটাই, চা বলয়ের হারানো ভোটব্যাঙ্ক ফিরিয়ে আনা।