উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

রেল দুর্ঘটনার উদ্ধারকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল উত্তরবঙ্গ, ভালোবাসার নজির গড়ল জলপাইগুড়ি

January 15, 2022 | 2 min read

সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে উদ্ধারকার্যে বারবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলা, এটাই বাংলার ঐতিহ্য। তেমনই নজির গড়ল তিস্তাপাড়ের শহরটি।ভালবাসা উজাড় করে দিল জলপাইগুড়ি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার খবরে শিউরে উঠেছিল বাংলাসহ গোটা দেশ। কিন্তু এই শুনে বসে থাকেনি বাংলা। যেকোন দুর্ঘটনার পরে দ্রুত উদ্ধারকার্য অনেক প্রাণহানি লাঘব করে দিতে পারে, তাই দ্রুত উদ্ধারকার্য শুরু করার দরকার ছিল। কেবল পুলিশ, প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা ডাক্তারেরা নয়, সেই সঙ্গে বিপুল পরিমান জনশক্তির প্রয়োজন হয়। দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে, স্থানীয়েরা এদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আহতদের উদ্ধার করা থেকে শুরু করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সব করল জলাপাইগুড়ি। 

অচেনা মানুষদের জন্য এমন করেও লড়া যায়, তাও এই যুগে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিবার-সমাজ সব ভেঙে যাচ্ছে। সেখানেই উলোট পুরান করে দেখাল জলপাইগুড়ি। কেমন যেন উল্টো পথে হেঁটে উত্তরবঙ্গের শহরটি রুখে দাঁড়াল জীবন-মৃত্যুর মাঝে। একদিকে আহতের সংখ্যা বেড়েছে আর অন্যদিকে বেড়েছে ভিড়। ভিড়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি। ভিড় জমেছে রক্ত দিতে, স্বত:স্ফূর্ত রক্তদানের এমন ভিড় আগে দেখেনি বাংলা! জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের সামনে এসেছেন কাতারে কাতারে মানুষ। লম্বা লাইন। জীবন বাঁচাতে অদম্য লড়াই লড়ে দিল জলপাইগুড়ি।

দুর্ঘটনার দিন সারা সন্ধ্যা জুড়ে চলল জীবন দান। অচেনা মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ছুটলেন অনেকেই। রাত জেগে ২৩১ ইউনিট রক্ত দিল বাংলা। পর দিন অর্থাৎ শুক্রবারও চলল রক্ত দান। গতকাল বিকেল চারটে পর্যন্ত জমা পড়ল ১১২ ইউনিট রক্ত। সর্বমোট ৩৪৩ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হল। 


ভিড়ে লাইন দিতে দেখা গেল পাঁচ জন যুবককে, দুর্ঘটনা পীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে তারা হলদিবাড়ি থেকে ছুটে এসেছেন। তাদেরই মধ্যে একজন, খোকন দেব জানান, “১৯৯৯-এর গাইসালের রেল দুর্ঘটনার সময় ছোটছিলাম। পরে পড়েছি, রক্তের অভাব থাকলে চিকিৎসায় কতটা সমস্যা হতে পারে জানি। তাই দোমোহনির কথা শুনেই ছুটে এসেছি।” ৩৬ কিলোমিটার দূর থেকে পাঁচ বন্ধুরা মিলে সকাল সকাল গাড়ি ভাড়া করে রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন। প্রথমবারের জন্য রক্ত দিলেন নিখিল কর্মকার, মোহিতনগর থেকে ছুটে এসেছেন তিনি। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ একা বা কেউ সংগঠন থেকে এসেছেন। দিয়ে গেলেন জীবন।

তৃণমূলের সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় সিংহরায়ের নেতৃত্বে বেশ কিছু কর্মী রক্তদান করে গিয়েছেন। যুব তৃণমূলের কর্মীরাও রক্ত দিতে এসেছিলেন। মীরা ফাউন্ডেশন বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করল পুরোদমে। তারা রক্তের শর্করা পরীক্ষা শিবিরও চলল। পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ চৌধুরীকে বিরল নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতাদের নিয়ে আসতে দেখা গেল। 

গত দুদিন ধরে তিস্তাপাড়ের শহরটিতে এক সহমর্মিতার দৃশ্য ধরা দিল। এসব দেখে মনে হয় নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্রের বাংলা আজও অক্ষত আছে। ভালোবাসার নজির গড়ে জলপাইগুড়ি জিতে নিল জীবনের লড়াই। জিতিয়ে দিল বাংলাকে, গোটা দেশকে দেখিয়ে ছিল, এটাই বাংলা, বাঙালিরা এমনই। আর বাংলা যেন ফেলুদার মতো জলপাইগুড়িকে বলছে সাব্বাস জলপাইগুড়ি!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#blood donation, #jalpaiguri, #moynaguri, #bikaner guwahati express

আরো দেখুন