ময়নাগুড়িতে রেল দুর্ঘটনার পর বুলেট ট্রেনের সঙ্গে বিকানের এক্সপ্রেসের তুলনা টেনে কটাক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ায়
দেশবাসীকে বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন দেখানো প্রধানমন্ত্রী, লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সুরক্ষা দিতে পারেন না। ঘণ্টায় ৩০০ কিমি গতির বুলেটের স্বপ্ন দেখান, অথচ ৪০ কিমিতেই উল্টে গেল বিকানির এক্সপ্রেস। ময়নাগুড়ির দোমোহনিতে গুয়াহাটিগামী এই এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে এমনই মিমে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। যাত্রীসুরক্ষায় রেলের উদাসীনতা নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা মিম। এদিকে দুর্ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রেলের প্রাক্তন রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা লোকসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদির আমলে কেন সুরক্ষা খাতে রেলের বরাদ্দ কমে যাচ্ছে? কেন বুলেট ট্রেন চালাতে ব্যস্ত এই সরকার প্যাসেঞ্জার ও এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করবে না?
রেল দুর্ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করে লাগাতার কটাক্ষ চলছে। নেটিজেনরা এই ঘটনায় যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতাকে দায়ী করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখেছেন, ‘৩০০ কিমি গতির বুলেটের স্বপ্ন দেখা দেশে ৪০ কিমি গতির ট্রেন উল্টে যায়। রামের নামে ভোটের পর ভোট পার হয়, নিরাপত্তা থেকে যায় সেই তিমিরেই।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে গুজরাতের সবরমতী স্টেশন থেকে ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দ্রুতগতির বুলেটের ৫০৮ কিমি প্রকল্প শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কেন্দ্র। মুম্বই আমেদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্পে প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে প্রাথমিকভাবে ঘোষণা হয়। বৃহস্পতিবার রেল দুর্ঘটনার পর এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক নেতারা।
এদিন কটাক্ষের সুরে অধীরবাবু বলেন, রেল দুর্ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের সরকার ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর করার জন্য ব্যস্ত। মুম্বই-আমেদাবাদ বুলেট ট্রেন চালানোর জন্য তারা চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। সেখানে এক কিলোমিটার ট্রেন চালাতে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হবে। আড়াই কোটি মানুষ ভারতবর্ষে প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের সব থেকে বড় দায়িত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু, কেন্দ্র সেটা করছে না। ডেপ্রিসিয়েশন রিজার্ভ ফান্ডে (ডিআরএফ) টাকা বরাদ্দ হচ্ছে না। এখানে টাকা বরাদ্দ না হলে রেলওয়ে ট্র্যাক রিপ্লেসমেন্ট ও অন্যান্য সুরক্ষার বিষয়টি নজর দেওয়া যায় না।
অধীরবাবু বলেন, আইসিএফ কোচ পাল্টানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে কথাবার্তা চলছে। কিন্তু কেন আনা হয়নি? এলএইচবি কোচ থাকলে এভাবে ঘাড়ের উপরে উঠে যেত না। ট্র্যাক ঠিক থাকলে বেলাইন হওয়ার ঘটনা ঘটত না। এ দেশে যত রেল দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৫৩ শতাংশ শুধু লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে। তাই রেলওয়ে ট্র্যাকে দিকে নজর দেওয়া দরকার। কিন্তু রেলকে বেসরকারিকরণ করাই এই সরকারের লক্ষ্য। তাই সব ব্যাপারে তারা উদাসীন।