দেশ বিভাগে ফিরে যান

গঙ্গা সংস্কারের ১৩০০ কোটি থেকে বঞ্চিত বাংলা

January 15, 2022 | 2 min read

সামনেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। মা গঙ্গার উপর নির্ভরশীল হয়ে ভোট বৈতরণী পেরতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ করিডর প্রকল্পের উদ্বোধনের দিন কলস মাথায় ডুব দিয়েছেন গঙ্গায়। অথচ বাংলায় সেই হুগলি নদী নিয়েই তিনি ও তাঁর সরকার চরম উদাসীন। ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-র (এনএমসিজি) অধীনে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার তিনটি বৃহৎ প্রকল্পে একটি টাকাও দেয়নি মোদী সরকার।

মোদীর গঙ্গাস্নান নিয়ে চরম কটাক্ষ করেছিলেন মমতা, ‘ওরা শুধু ভোটের সময় গঙ্গাকে মনে রাখে ভোটের পরে ভুলে যায়…।’ এবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের তথ্যে মিলল তার প্রমাণ। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের দুয়োরানি সুলভ আচরণ নতুন নয়। কিন্তু গঙ্গাদূষণের ব্যাপারেও যে তাদের একই মনোভাব, সেটা ফের প্রকাশ্যে।

গঙ্গাদূষণ রুখতে জরুরি তরল বর্জ্য পরিশোধন। নয়তো জলে মিশবে ক্রোমিয়াম, লেড, নিকেলের মত ভারী ধাতু ও বিষ। তা পরিশোধনের জন্য প্রয়োজন উন্নত পরিকাঠামো যুক্ত সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এই কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রের কাছে তিনটি প্রকল্প পাঠায় রাজ্য সরকার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মেলে প্রশাসনিক ছাড়পত্র। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের জন্য মেলেনি একটা নয়া কড়িও। অথচ এই ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ খরচই বহন করার কথা কেন্দ্রের।

এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের টালি নালার জন্য সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্প। কারণ, এই নালা প্রতিদিন কলকাতা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ৯৮০ মিলিয়ন লিটার জলীয় বর্জ্য ধারণ করে। তাই টালিনালার ধারে গড়ে ওঠার কথা ২৬.১ এমএলডি ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বারবার দরবার সত্ত্বেও কোনও টাকা না পেয়ে প্রকল্পটি নিয়ে এখন ঘোর অন্ধকারে রাজ্য। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, মাসখানেক আগেও রাজ্যের এক প্রতিনিধি দল দিল্লিতে গিয়ে এব্যাপারে আর্জি জানিয়ে এসেছেন। তারপরেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় রাজ্যের কোষাগারের টাকায় কমিউনিটি টয়লেট থেকে শুরু করে টালি নালার পাশের কঠিন বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কারের মতো নানান কাজে হাত দিয়েছে নবান্ন। প্রায় ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চলছে সবথেকে দূষিত ৪.৬ কিমি এলাকা ড্রেজিংয়ের কাজ। গঙ্গা থেকে চেতলা পর্যন্ত বাদবাকি ড্রেজিংয়ের জন্য খরচ হচ্ছে আরও ১১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। একই অবস্থা দামোদর ও বরাকর নদীর জন্য অনুমোদিত আসানসোল-দুর্গাপুর সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্পের। ৬৭২ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়ার কথা ১৭৫ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন আটটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের। এই প্রকল্পের সমস্ত তথ্য রাজ্য সরকার এনএমসিজিকে জমা দিয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও টাকা ছাড়া হয়নি। আবার বর্ধমানের বাঁকা নদীর দূষণরোধে ২৩৪ কোটি টাকার স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্পের আর্থিক অনুদান নিয়েও নিশ্চুপ কেন্দ্র। তিনটি প্রকল্প মিলে রাজ্যের এখন প্রাপ্য ১৩০৬ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা।


এই ইস্যুতে সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, একাধিকবার বলা সত্ত্বেও রাজ্যকে এই তিনটি প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। শুধু গঙ্গাদূষণ ও টালি নালা নিয়ে চিৎকার করছে। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা গঙ্গাদূষণ রোধে অনেক কাজ হাতে নিয়েছি। কালজানি, শিলাবতী, জলঙ্গি, ময়ূরাক্ষী ও দ্বারকেশ্বর নদীর দূষণ রুখতে ৯৪.৯৯ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। কেষ্টপুর-বাগজোলা খালের জন্যও নমামি গঙ্গে প্রকল্পের অধীনে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ছাড়পত্রের প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছিল নবান্ন। কিন্তু সেই আবেদনের সদুত্তর মেলেনি। 


এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, কেন্দ্র শুধু স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও তার সংলগ্ন কিছু পরিকাঠামোর টাকা দেয়। কিন্তু বাড়ি বাড়ি সংযুক্তিকরণের খরচ বহন করতে হয় রাজ্যকেই। হালিশহর, বাব্যারাকপুর, বজবজ, কল্যাণী, গয়েশপুর এবং ভাটপাড়ায় এই কাজের জন্য এখনও পর্যন্ত ১৫৩ কোটি টাকা খরচ করেছে নবান্ন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Ganga renovation, #West Bengal, #ganga river

আরো দেখুন