অকাল বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা, রাজ্যজুড়ে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের মাঠে নামালো সরকার
একটানা মুষলধারে বৃষ্টি নয়। পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বিক্ষিপ্ত কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি। আর এতেই মাথায় হাত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের চাষীদের। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় যেমন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সর্ষে, মুসুর ও খেসারি চাষের, তেমনই আলু চাসে ধসা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই অকাল বৃষ্টিতে কিছু জায়গায় চাষের ক্ষয়ক্ষতির খবর এসে পৌঁছেছে নবান্নে। আবার বহু জায়গায় চাষে ক্ষতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের। তাই রাজ্যজুড়ে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের আগেভাগেই মাঠে নামিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই আধিকারিকরা ফসল নষ্ট হওয়া রুখতে চাষীদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। বৃষ্টির ফলে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থেকে আলুর জমিতে নাভি ধসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। রোগহীন আলু গাছে প্রতিরোধক হিসাবে স্প্রে করতে বলা হয়েছে ছত্রাক নাশক। আলু গাছ নাভি ধসাতে আক্রান্ত হলে, কী ধরনের কীটনাশক দিতে হবে, তাও বলা হচ্ছে চাষীদের। বৃষ্টিপাতের আগে বা থামার পর রোগহীন সবজি খেতে ছত্রাক ঘটিত রোগের প্রতিরোধক হিসাবে কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, সে উপদেশও দিচ্ছেন কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা। বৃষ্টিপাতের পর সব্জি-ফসল রোগাক্রান্ত হলে সঠিক রোগ নির্ণয় ও নিরাময় করতেও চাষীদের সাহায্য করছেন তাঁরা। এই ধরনের আর্দ্র আবহাওয়ায় সর্ষে চাষে সাদা মরিচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই ক্ষেত্রে চাষীদের কী করনীয়, তাও লিফলেট আকারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তাদের কাছে।
এর আগে অকাল বৃষ্টিতে ধান চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজ্যে। তাই এবার সজাগ কৃষি দপ্তর আগেভাগেই পৌঁছে যাচ্ছে চাষীদের কাছে। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়ার নতুন জেলায় এখন চলছে আলু চাষ। আলু চাষের জমিতে জল জমার মতন বৃষ্টিপাত হয়নি। কিন্তু ধসা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যেমন পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় কৃষি জমি পরিদর্শনে গিয়ে স্বপন ঘোষ নামে এক চাষীর আলু খেতে ধসা রোগ ধরতে শুরু করেছে বলে নজরে আসে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের। এই রোগ প্রতিরোধে ঠিক কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা জানিয়ে দেন। একই সাথে জেনে নেওয়া হচ্ছে চাষিরা কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতাধীন কি না, সেটাও।
এদিকে সর্ষে, মুসুর, খেসারি ও ও কাঁচা সব্জির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতি ব্লকের ছটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪ টি মৌজায়। এখানে বৃহস্পতিবার রাত ন’টা নাগাদ চার থেকে পাঁচ মিনিট দমকা হাওয়ার সাথে শিলা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয় ফসলের। শুক্রবার সকালেই ওমরপুর, কাশিমনগর, মহেশাইল ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে তড়িঘড়ি পৌঁছে যান কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা। শুরু করা হয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ। বাঁকুড়ার ছাতনাতেও শিলাবৃষ্টিতে আলু, সর্ষে সহ সব্জির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়াও গেছে। এখানেও শিলাবৃষ্টি হয় মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিটের জন্য। কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, অসময়ের এই বৃষ্টির জন্য আমাদের প্রত্যেক আধিকারিককে মাঠে নামানো হয়েছে। যেখানে যেখানে বৃষ্টি হয়েছে সেখানে চাষে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা দ্রুত মূল্যায়নের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। একই সাথে কীভাবে মাঠে থাকা শস্যকে ধসা ও অন্যান্য রোগ থেকে বাঁচানো যায়, চাষীদের সেই পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছেন আধিকারিকরা।