দিল্লির সাধারণতন্ত্র দিবসে বাদ সুভাষ ট্যাবলো! মোদীর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্বয়ং নেতাজি-কন্যা
নেতাজিকে নিয়ে কোনওরকম ছেলেখেলা চান না তিনি। সুভাষচন্দ্রের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে জাম্বো কমিটি গড়েছিলেন, তার একটি বৈঠকও হয়নি। যা দুর্ভাগ্যজনক। একইভাবে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির ভূমিকা নিয়ে তৈরি রাজ্যের ট্যাবলো বাতিলের খবরেও বিষন্ন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে এই মর্মেই রবিবার ক্ষোভ ব্যক্ত করলেন স্বয়ং নেতাজি-কন্যা অনিতা বসু পাফ। এদিন জার্মানি থেকে ফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অনিতা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কেন নেতাজি সম্পর্কে এমন উদাসীন, তা জানতে চেয়ে তিনি শীঘ্রই মোদীকে চিঠি পাঠাবেন।
স্বাধীনতার ৭৫ তম এবং নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীকে সামনে রেখে এবার সাধারণতন্ত্র দিবস উদ্যাপনের পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। সেকারণে সাধারণতন্ত্র দিবসের কর্মসূচির সঙ্গেই ২৩শে নেতাজির জন্মদিনটি জুড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার নেতাজিকে নিয়ে যে ট্যাবলো তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল, তা বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্র। এনিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষুব্ধ নেতাজির পরিবারের সদস্যরাও। যদিও এদিন নেতাজির সম্পর্কে নাতি তথা বসু পরিবারের মুখপাত্র চন্দ্রকুমার বসু এনিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। চন্দ্রবাবুর দাবি, রাজনাথ তাঁর সচিবের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ২৬শের অনুষ্ঠানে তাঁর মন্ত্রক নেতাজিকে নিয়ে একটি বিশেষ ট্যাবলো তৈরি করছে। তবে ট্যাবলো নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রক কেন সেকথা জানাল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চন্দ্রবাবু।
ট্যাবলোর ছাড়াও নেতাজির জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়েছে। নেতাজি-কন্যা অনিতা নিজেই এদিন মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, বাবার ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাতে আমাকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে ওই কমিটির কোনও অস্তিত্ব টের পাইনি। কোনও বৈঠকই হয়নি। এমনকী, সরকারের তরফে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। ওদের মনে রাখা দরকার, নেতাজির কিন্তু ছেলেখেলার পাত্র নন। কোনও উদ্যোগই যদি না নেওয়া হয়, তাহলে ঘটা করে কমিটি বানানোর কী ছিল? এখন শুনছি, সাধারণতন্ত্র দিবস উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে নেতাজির জন্মদিনটি পালন করা হবে। সরকারের এই পদক্ষেপকে নিশ্চয়ই ধন্যবাদ। কিন্তু এ নিয়ে সরকার সারা বছর চুপ করে থাকল কেন? এটা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক।
এদিকে, রাজ্যের ট্যাবলো বাতিল নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে বিজেপি বিরোধী সবকটি দল। তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেতাজি এবং তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদানকে খাটো করল। তাপস রায়ের কথায়, এটা নেতাজির পাশাপাশি গোটা বাংলার অপমান। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, নেতাজির মতো চরিত্রের মূল্যায়ন করার ক্ষমতা বিজেপি বা মোদীর নেই। গত বিধানসভা ভোটে বাঙালির আবেগ নিয়ে ফায়দা তুলতে এ নিয়ে হইচই করেছিলেন মোদীরা। হেরে যাওয়ার পর এখন অসম্মান করছেন নেতাজিকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তবে বিজেপি’র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রের এই অবস্থানে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না। তাঁর কথায়, ঠিক করেছে। দিল্লির লোককে এখানে ঢুকতে দেবে না। তাহলে ওরাই বা কেন ট্যাবলো করতে দেবে?