বদলে যাবে মিষ্টির স্বাদ, বাংলার মিষ্টান্ন বিক্রেতাদের মধুর জোগানে উদ্যোগী রাজ্য
নতুন গুড়ের রসগোল্লা বা সন্দেশের জন্য বছরভর হাপিত্যেশ করে বসে থাকে বাঙালি। শীতের এই ক’দিনই শুধু স্বাদ বদলের সুযোগ। মিষ্টিমুখের সেই স্বর্গীয় সুখ বড়ই ক্ষণস্থায়ী। বছরের বাকি দিকগুলোতে চিনির চেনা স্বাদের সেই মিষ্টিগুলিই শুধু মেলে। গুড়ের মিষ্টি মোটেই পাওয়া যায়না। খাদ্যরসিকদের সেই চিরকালীন আক্ষেপ দূর করতে নিরন্তর চেষ্টা চালান মিষ্টিওয়ালারাও। চিনির মিষ্টত্বকে টেক্কা দিতে তাঁদের বাজি মধু। মিষ্টির গঠন ও স্বাদ বদলাতে মধুতে ভরসা রাখেন বহু মিষ্টান্ন বিক্রেতা। স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অনেক বেশি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য মধু। কিন্তু খাঁটি মধু দেবে কে? এবার মিষ্টান্ন বিক্রেতাদের জন্য সেই উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। চাষিরা যাতে সরাসরি সুন্দরবন ও বাংলার অন্যান্য জায়গার মধু মিষ্টিওয়ালাদের বিক্রি করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করবে কৃষি বিপণন দপ্তর। মধুর পাশাপাশি এই তালিকায় আছে খেজুর গুড়ও।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধুর জুড়ি মেলা ভার। তা দেশের সর্বত্র সমাদৃত। ইতিমধ্যেই তার স্বত্ব নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে সরকারি তরফে। সুন্দরবনের মধু যাতে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা পায়, তার জন্য আবেদন করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। সুন্দরবন ছাড়াও অন্যান্য জায়গাতেও কিছু পরিমাণ মধু চাষ হয়। কিন্তু যে পরিমাণ মধু উৎপাদন হয়, তার বাজার পেতে কালঘাম ছোটে চাষি বা ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে খাঁটি মধুর সন্ধানে থাকে মিষ্ট্রি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও। এই দুয়ের সংযোগ স্থাপন করিয়ে দিতে আসরে নেমেছে কৃষি বিপণন দপ্তর। এক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা চাষিরা সরাসরি যোগাযোগ করবেন মিষ্টিওয়ালাদের সংগঠন ‘মিষ্টি উদ্যোগ’-এর সঙ্গে। সেখানকার সদস্যরা প্রয়োজন মতো মধু কিনে নেবেন তাঁদের থেকে। এতে যেমন খাঁটি মধু মিলবে, তেমনই ন্যায্য দামও পাবেন বিক্রেতারা।
মধুর পাশাপাশি খেজুর গুড়ের ব্যাপারেও প্রাথমিক কথা হয়েছে কৃষি বিপণন দপ্তরের সঙ্গে, জানাচ্ছেন মিষ্টি উদ্যোগের কর্তারা। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে খেজুর গুড় মেলে। কিন্তু সঠিক দামে তার বিক্রিতেও সমস্যা থেকে যায়। ভালো মানের নলেন গুড় কিনতে নানা জায়গায় ঢুঁ দিতে হয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের। সেই সমস্যার সমাধানও করতে চায় কৃষি বিপণন দপ্তর। মিষ্টান্ন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্তারা বলছেন, শীতে উৎকৃষ্ট মানের মিষ্টি তৈরি তখনই সম্ভব যখন সঠিক মানের গুড় মিলবে। আমরা যদি হাতের কাছে সেই গুড় পেয়ে যাই, সোনায় সোহাগা হবে। এতে যেমন ক্রেতারা খেয়ে সন্তুষ্ট হবেন, তেমনই গুড় চাষিদের মুখেও হাসি ফুটবে। শীঘ্রই এই পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদী তাঁরা।