বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দিতে এবার কলকাতায় হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবা
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দিতে এবার কলকাতায় চালু হল হোয়াটসঅ্যাপ-বট পরিষেবা। একটি নম্বরে (৯৮৩০০৩৭৪৯৩) হোয়াটসঅ্যাপ করলে বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে আসবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি, ২৫টি থেকে বাড়িয়ে ৩৭টি কোভ্যাকসিন সেন্টার করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কারা টিকা নেননি, তার তালিকাও বানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ।
শহরের পাঁচটি বরো এলাকায় নিয়মিত নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সংক্রমণ। নানা বিধি-নিষেধ জারি করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। এবার তাই বরোভিত্তিক জরুরি বৈঠক ডাকল পুর কর্তৃপক্ষ। আর কী উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়েই আলোচনা হবে বৈঠকে। নজরে রয়েছে মূলত আবাসনগুলি। সেই কারণে আবাসন কমিটির প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। তবে খানিকটা স্বস্তি দিয়ে ফের কিছুটা কমল শহরের সংক্রামিত অংশ বা মাইক্রো কন্টেইনমেন্ট। সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৪টি থেকে তা কমে ৩৩টি হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, মূলত শহরের ৩, ৭, ৮, ১০ ও ১২ নম্বর বরো এলাকায় করোনা সংক্রমণকে বাগে আনা যাচ্ছে না। এই এলাকাগুলির মধ্যে গল্ফ গ্রিন, নেতাজিনগর, আজাদগড়, বিজয়গড়, টালিগঞ্জ, নিউ আলিপুর, ঢাকুরিয়া, যোধপুর পার্ক, যাদবপুরের কিছু অংশ, বাঘাযতীন সহ ১০ নম্বর বরোর বিস্তীর্ণ এলাকা সবথেকে চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। গত ১৪ দিনের হিসেব বলছে, এখানকার ১২টি ওয়ার্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারের বেশি। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি মেয়র তথা পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, প্রথমে ১০ নম্বর বরো দিয়ে বৈঠক শুরু হচ্ছে। যে যে এলাকায় সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে, সেখানেই এই ধরনের বৈঠক হবে। বিশেষ করে ওই সব অঞ্চলের বাজারগুলির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, মূলত আবাসন এলাকাগুলিতে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। তাই আর কী ধরনের পদক্ষেপ করা যায়, সেই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকাকরণে জোর দিতে চাইছি। সেই কারণে কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে।
৮ নম্বর বরোর গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, রাসবিহারী, দেশপ্রিয় পার্ক, হিন্দুস্তান পার্ক, হাজরা ও ভবানীপুরের কিছু অংশ, হাজরা রোড, গরচা এলাকাতেও দিনদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত দু’সপ্তাহে এইসব অঞ্চলে সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ সংক্রামিত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে ১২ নম্বর বরো। সেখানকার কসবা, রুবি, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর, অজয়নগর, গড়ফা, নোনাডাঙা, সার্ভে পার্ক অঞ্চলে গত ১৪ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। বাইপাস সংলগ্ন বেলেঘাটা, তপসিয়া, তিলজলা, পার্ক সার্কাস, পঞ্চান্নগ্রাম, পিকনিক গার্ডেন, কুষ্টিয়া, শেক্সপিয়র সরণি, পার্ক স্ট্রিটের একাংশ নিয়ে গঠিত ৭ নম্বর বরোয় গত দু’সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। উত্তর কলকাতার ৩ নম্বর বরো এলাকায় উল্টোডাঙা, মানিকতলা, খান্না, হাতিবাগান, কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগানের একাংশে গত ১৪ দিনে সংক্রামিত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ।
এদিন ৩৩টি মাইক্রো কন্টেইনমেন্টের তালিকা প্রকাশ করেছে পুরসভা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সবথেকে বেশি, ১২টি জোন রয়েছে ১০ নম্বর বরো এলাকায়। ওয়ার্ডভিত্তিক হিসেব ধরলে সবথেকে বেশি ছ’টি জোন ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে আছে। আবাসনের হিসেবে সবথেকে বেশি কন্টেইনমেন্ট রয়েছে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের জেন-এক্স ভ্যালিতে। এই আবাসনেই পাঁচটি সংক্রামিত অংশ রয়েছে। অন্যদিকে, কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামের সেফহোম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। সেখানে ১১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী বর্তমানে রয়েছে। তাঁরা ছুটি পেলে গীতাঞ্জলি সেফ হোম বন্ধ করে দেওয়া হবে। আপাতত সায়েন্স সিটি সংলগ্ন একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে তৈরি সেফ হোম চালু থাকছে। কলকাতায় সংক্রমণ খানিকটা কমেছে, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছে পুর কর্তৃপক্ষ।