সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জল নয়, মাটির ওপরের জল ব্যবহারে জোর রাজ্য সরকারের
পরিবেশের স্বার্থে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের জলের উৎসেও ভরসা বাড়াতে বলছেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু তার জন্য কার্যকরী করার কোনও পরিকাঠামো না থাকায় এই ভাবনা সাধারণত বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তবে এবার সেচের কাজে মাটির নীচের বদলে ওপরের উৎস থেকে নেওয়া জলের ব্যবহার বাড়াতে বড় প্রকল্প হাতে নিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কৃষিদপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই প্রকল্পের রূপরেখা জানিয়ে দিয়েছে জেলা ও রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের। সেই বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যাচ্ছে, স্প্রিংকলার ও ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে ফসলের জমিতে সেচের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। তাছাড়া নদী, পুকুর বা ঝিলের মতো সাধারণ জলের উৎস ব্যবহার করা হবে সেচের জন্য। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২৮২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজ্যের ১০টি জেলায় কৃষিক্ষেত্রের কিছু ক্লাস্টার বা অঞ্চল বেছে নেওয়া হচ্ছে এই কাজের জন্য।
যে ১০টি জেলাকে এই কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূম। এই ১০টি জেলার মধ্যে মুর্শিদাবাদের জন্য সবথেকে বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই জেলা পাচ্ছে ৬৬ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। পরিকল্পনা থেকে আরও জানা যাচ্ছে, মোট ৭০ হাজার ৫৯৬ হেক্টর জমিতে স্প্রিংকলারের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করা হবে। এক-একটি স্প্রিংকলারের দাম ২৮ হাজার টাকা। ড্রিপ ইরিগেশন হবে ৪,০২৩ হেক্টর জমিতে। ১০ টি জেলায় সব মিলিয়ে ২১৬টি জলাশয় খনন বা সংস্কার হবে। এছাড়াও বসানো হবে মোট ১৪ হাজার ৪৪০ মিটার পাইপলাইন। নতুন ধরনের এই সেচ ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ১,৯২০টি শিবির করা হবে।
নবান্ন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল মাটির তলার জল না তোলা। কারণ ভূগর্ভস্থ জলস্তর ফুরিয়ে আসায় শিয়রে বিপদের কথা পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা অনেক দিন থেকেই বলে আসছেন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমাতেই হবে। এই পরিস্থিতিতে ‘মাইক্রো ইরিগেশন সিস্টেম’ চালু করতে বাংলা কৃষি সেচ যোজনার আওতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদন দিয়েছে নাবার্ড। ফলে এখন শুধু বিভিন্ন জেলায় কাজ শুরুর অপেক্ষা। দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, এই কাজে কৃষকদের সবরকম সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার। ব্লকের কৃষি আধিকারিকদের নবান্ন থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। আরও ঠিক হয়েছে, যেখানে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে পুকুর কাটা হয়েছে, সেইসব পুকুরের জল সেচের কাজে ব্যবহার করা যাবে।