প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ কলকাতা হাইকোর্টে
গত ডিসেম্বর থেকে ১৬ হাজার ৫০০ শূন্যপদে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত শেষ হয়েছে রাজ্যে। কলকাতা হাইকোর্টের এক নির্দেশে ৭৩৮টি পদ এখনও ফাঁকা আছে। বাকি সব পদ পূরণ হয়েছে। এই অবস্থায় একদল মামলাকারী দাবি করেছিল, এনসিটিই’র যে বিজ্ঞপ্তি অনুসরণে বিএড উত্তীর্ণদের এই পদে নিয়োগ করা হয়েছে, সেটি রাজস্থান হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। যা কোথাও চ্যালেঞ্জ হয়নি। এমতাবস্থায় পদগুলি ডিএলএড উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকেই পূরণ হওয়া উচিত। কিন্তু এই দাবিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট সাড়া দিল না। বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলে দিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মামলাকারীরা যোগ্য বিবেচিত হননি। তাই তাঁদের এই আবেদনের সূত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ সঠিক হবে না। কারণ, সেক্ষেত্রে যাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন তাঁদের প্রতি অবিচার হবে। তাই সব পক্ষ হলফনামা জমা দিক। চার সপ্তাহ পরে বিষয়টি শোনা হবে। তবে যে ৭৩৮টি পদ এখনও ফাঁকা আছে সেখানে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যেন কোনও বিএড প্রার্থীকে আর নিয়োগ না করে।
উল্লেখ্য, ১৬ হাজার ৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক পদ পূরণে পর্ষদ ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বরে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সেইমতো এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। মামলাকারীদের বক্তব্য, প্রাথমিকের শিক্ষাদানে বিএড প্রশিক্ষণের দরকার নেই। ডিএলএড প্রশিক্ষিতদের মধ্যে থেকেই নিয়োগ হওয়া উচিত। আর এই যুক্তিকেই সামনে রেখে রাজস্থান হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এনসিটিই’র সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি (২০১৮ সালের ২৮ জুনের) গত বছর ২৫ নভেম্বর খারিজ করে দিয়েছে। অথচ সেই বিজ্ঞপ্তির সূত্রেই এখানে বিএড উত্তীর্ণদের নিয়োগ করা হচ্ছে। যা আদালতের রায়ের পরিপন্থী। প্রসঙ্গত, এনসিটিই’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল, সারা দেশেই এখন থেকে স্নাতক পর্যায়ে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর ও বিএড প্রার্থীদেরই প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে। তবে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য নিযুক্ত এই শিক্ষকদের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ছয় মাসের একটি ব্রিজ কোর্স করে নিতে হবে।
মামলাকারীদের দাবি, রাজস্থান হাইকোর্টের নির্দেশটি উচ্চতর আদালত তথা সুপ্রিমকোর্ট যতক্ষণ না খারিজ বা পরিমার্জন করছে, ততদিন সারা দেশের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে পর্ষদের তরফে বলা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীরা কোনওভাবেই কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। যে নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০০০ সালে শুরু হয়েছে তাতে এখন নাক গলানো যায় না। তৃতীয়ত, রাজস্থান হাইকোর্টের রায় পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হতে পারে না। তাই কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশও দেওয়া অনুচিত।
এমতাবস্থায় আদালত জানিয়েছে, এই হাইকোর্টেরই এক নির্দেশ বলে অফলাইনে আবেদনপত্র জমা করা প্রার্থীদের জন্য ৭৩৮টি পদ এখনও ফাঁকা আছে। তা নতুন নয়। এই সব পদ পূরণ করার জন্য নতুন কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। তাছাড়া বিএড
উত্তীর্ণরা যে সুবিধা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পেয়েছেন বা পেতে চলেছেন, তা হঠাৎ প্রত্যাহার করা যায় না। সেই সঙ্গে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, সুপ্রিমকোর্ট ইতিমধ্যে এনসিটিই’র ওই বিজ্ঞপ্তির পক্ষেই রায় দিয়েছে। ফলে রাজস্থান হাইকোর্টের রায়ের বদলে সুপ্রিমকোর্টের রায়কেই গ্রহণ করতে হবে।