বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম মুখ মমতাই, বুঝতে চাইছে না কংগ্রেস?
একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দিয়ে বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আর তারপরেই বিজেপি বিরোধিতায় জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তৃণমূল। প্রধান মোদী বিরোধী মুখ হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শরদ পাওয়ার, অখিলেশ যাদবরা তা মেনে নিলেও সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীরা তা বোঝেননি। নাকি বুঝেও বুঝতে চান না তাঁরা, নামটা যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সাত দফায় ৪০৩ আসনে ভোট। সরকারে বিজেপি। সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে। তবু গেরুয়া শক্তির বিরুদ্ধে একাই লড়াই করছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। আর বিভিন্ন সমীক্ষা ও বিশ্লেষণ সামনে আসার পর বোঝা যাচ্ছে, গদি হারানোর মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। অখিলেশের পক্ষে একক গরিষ্ঠতাও দেখাচ্ছে কোনও কোনও রিপোর্ট।
বেশ কিছুদিন আগে থেকেই অখিলেশের জনসভায় জনজোয়ার দেখা যাচ্ছিল। উলটো দিকে, বিজেপির সভা ফাঁকা। এখন করোনার অজুহাতে সভা-সমিতি প্রায় বন্ধ উত্তরপ্রদেশে। অভিযোগ, বিরোধীরা যাতে প্রচার করতে না পারে সেজন্যই এই পন্থা। গোটা বিষয়টি নিয়ে যখন শোরগোল শুরু হয়েছে, ঠিক এই সময় কালীঘাটে ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এসে উপস্থিত হলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা কিরণময় নন্দ।
বৈঠক শেষে কিরণময় নন্দ জানান, গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলকে সমর্থন দিয়ে কোনও আসনে প্রার্থী দেয়নি সমাজবাদী পার্টি। একইভাবে উত্তরপ্রদেশের ভোটেও তৃণমূল কোনও প্রার্থী দেয়নি। এবার, অখিলেশ যাদব একান্তভাবেই চান তৃণমূল নেত্রী প্রচারে আসুন লখনউয়ে। তাঁদের দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার প্রস্তাব মমতা গ্রহণ করেছেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মমতা-অখিলেশ ভারচুয়াল সভা করবেন লখনউয়ে। তারপর যৌথ সাংবাদিক বৈঠক।
দ্বিতীয় দফায় আবার মমতা প্রচারে যাবেন নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে। সেখানেও ভারচুয়াল সভা ও যৌথ সাংবাদিক বৈঠক হবে। রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ এই কর্মসূচী ঘোষণা হতেই সাংবাদিকরা কৌতূহলভরে কিরণময়বাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, উত্তরপ্রদেশে তৃণমূল কোনও শক্তিই নয়। তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ প্রচারে কেন আগ্রহ দেখাচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো?
এর জবাবে পোড়খাওয়া নেতা বলেছিলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম মুখ হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার বিধানসভার নির্বাচনে উনি বিজেপিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, কিরণময়বাবু বোঝাতে চাইলেন, মমতার বিজেপি-বিরোধী ভাবমূর্তিকেই দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে প্রচারের হাতিয়ার করতে চায় সমাজবাদী পার্টি। মোদীকে তিনি যেভাবে থামিয়েছেন, সেই ইমেজ কাজে লাগবে। সেই কারণেই তাঁকে লখনউয়ে আমন্ত্রণ।
এদিকে, এর পরেই স্পষ্ট কংগ্রেসের রাগটা কোথায়। কেন বারবার তৃণমূলকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন রাহুল গান্ধীরা। কেনই বা বারবার আহ্বান করা সত্ত্বেও গোয়ায় বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে সাড়া দিচ্ছেন না? আসলে বাংলায় বিজেপির স্বপ্ন চূর্ণ করে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগঠন তৈরির বার্তা পান মমতা। সেই প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, মেঘালয়, হরিয়ানা এবং গোয়ায় তৃণমূলের প্রবেশ। আসলে যে কাজ কংগ্রেস পারছে না, সেটাই করছে তাঁর দল।
আবার, বিজেপিকে হারিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতা যে মোদীর বিরুদ্ধে ‘মুখ’ হয়ে উঠেছেন। মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে রাহুল গান্ধীর ব্যর্থতার জন্য বিকল্প নাম হিসাবে মমতার কথাই উঠেছে। তাঁর পক্ষে বলার তালিকা দীর্ঘ। চল্লিশ বছর ধরে লড়াই আান্দোলনের ইতিহাস। সাতবারের সাংসদ। দুই বারের রেলমন্ত্রী। আরও চারটি মন্ত্রক চালানোর অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব পছন্দ নয় কংগ্রেসের।
সোনিয়া-রাহুলরা মনে করছেন তৃণমূলের আরও শক্তি বাড়লে মমতার লাভ। সেই কারণে গোয়ায় জোট গঠনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও গোয়ায় তৃণমূ্লের শক্তি বাড়ার মূল কারণ, কংগ্রেসের প্রতি মানুষের বিশ্বাস হারানো। মমতা গোয়া সফরে গিয়ে স্পষ্টই বলেছিলেন, তিনি এসেছেন বিজেপিকে হারানোর জন্য। এর বাইরে আর কোনও উদ্দেশ্য নয়। কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। বিজেপির হাতে সরকার তুলে দিয়েছে। না হলে ১২টি আসন নিয়ে কখনওই এই রাজ্য শাসন করতে পারত না গেরুয়া শিবির।
একই সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী এ-ও জানিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশেও তৃণমূলের সংগঠন করার ডাক রয়েছে। কমলাপতি ত্রিপাঠির পরিবার যোগ দিয়েছে। কিন্তু, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমাজবাদী পার্টিই যথেষ্ট। তাই তৃণমূল সংগঠন করবে না। ‘বন্ধু’ অখিলেশ যাদবকেই সমর্থন করবেন। উল্টোদিকে, মমতাকে আহ্বানের মধ্য দিয়ে মুলায়ম-পুত্র বোঝাতে চাইলেন, বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্ব কতটা। যেটা তিনি কাজে লাগাতে চান। সমাজবাদী পার্টি যা বোঝে, কংগ্রেস হয় বোঝে না, না হয় বুঝতে চায় না।